আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় তড়িৎ ক্ষেত্র : তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য ও তড়িৎ বিভব। যা বাউবি এইচএসসি ২৮৭১ পদার্থ বিজ্ঞান ২য় পত্র ইউনিট ১ স্থির তড়িৎ এর অন্তর্ভুক্ত।
তড়িৎ ক্ষেত্র : তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য ও তড়িৎ বিভব
তড়িৎ ক্ষেত্র (Electric Field )
আহিত বস্তুগুলোর মধ্যে ক্রিয়াশীল বল ব্যাখ্যা করার জন্য সর্বপ্রথম মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎ ক্ষেত্রের ধারণা উপস্থাপনা করেন। একে তড়িৎ ক্ষেত্র তত্ত্ব বা সংক্ষেপে ক্ষেত্র তত্ত্ব বলে। এই ধারণা অনুসারে, কোনো আহিত বস্তুর চারপাশে একটি অঞ্চলব্যাপী তার একটি প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। প্রভাব বলতে বুঝায় যে, ঐ অঞ্চলের মধ্যে অন্য একটি আহিত বস্তু স্থাপন করলে দ্বিতীয় আহিত বস্তুটি একটি বল অনুভব করবে।
আহিত বস্তুর চারপাশে যে অঞ্চল জুড়ে এই প্রভাব বিদ্যমান থাকে সেই অঞ্চলই এই আহিত বস্তুর তড়িৎ ক্ষেত্র। সুতরাং “ একটি আহিত বস্তুর চারপাশে যে অঞ্চলব্যাপী তার প্রভাব বিদ্যমান থাকে অর্থাৎ অন্য কোনো আহিত বস্তু স্থাপন করলে সেটি আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল লাভ করে, সে অঞ্চলকে ঐ আহিত বস্তুর তড়িৎ বলক্ষেত্র বা তড়িৎক্ষেত্র বলে।”
বলের প্রকৃতি আকর্ষক বা বিকর্ষক হবে তা নির্ভর করবে দ্বিতীয় আহিত বস্তুটির প্রকৃতির উপর। দ্বিতীয় আহিত বস্তুটি প্রথম আহিত বস্তুর সমধর্মী হলে বল বিকর্ষক হবে আর যদি দ্বিতীয় আহিত বস্তুটি প্রথম আহিত বস্তুর বিপরীতধর্মী হয়, তবে বল আকর্ষক হবে।
কোন আধানের জন্য সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্র তাত্ত্বিক অর্থে অসীম পর্যন্ত্ বিস্তৃত হবে; কিন্তু বাড়বে আহিত বস্তু কর্তৃক সৃষ্ট এ প্রভাব একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত্ অনুভূত হয়। ঐ নির্দিষ্ট দূরত্বের বাইরে প্রভাব এত ক্ষীণ যে, তা পরিমাপযোগ্য হয় না, এ প্রভাবের মাত্রা বা পরিমাণ তড়িৎক্ষেত্রের বিভিন্ন বিন্দুতে বিভিন্ন হয়।
তড়িৎ ক্ষেত্রের সাহায্যে কুলম্বের সূত্রের ব্যাখ্যা
কুলম্বের সূত্রানুসারে, qi এবং q2 দুটি আধান পরস্পর থেকে যে কোন দূরত্বে থাকলে q। আধান q2 আধানের উপর বল প্রয়োগ করবে, আবার q আধানও q আধানের উপর একই রকমভাবে বল প্রয়োগ করে। আধানের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে এই বল আকর্ষণ বল বা বিকর্ষণ বল হবে। আধান দুটি পরস্পরের স্পর্শে না থাকলে কিভাবে একটি আধান অপর আধানের উপর বল প্রয়োগ করে, এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই তড়িৎক্ষেত্রের অবতারণা করা হয়।
যখন কোনো স্থানে একটি আধান qi স্থাপন করা হয় তখন qi আধানের চারপাশে তড়িৎ প্রভাব অর্থাৎ তড়িৎ ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। q আধানের চারপাশের যে অঞ্চল জুড়ে এ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, সে অঞ্চলকে qi আধানের তড়িৎক্ষেত্র বলা হয়। q আধানের এ তড়িৎক্ষেত্র q2 আধানের উপর ক্রিয়া করে, এবং q আধান একটি বল অনুভব করে।
এ থেকে বোঝা যায় যে, q. আধানের উপর যে বল ক্রিয়া করে তা হলো q। আধানের দ্বারা তৈরি তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রভাব, একইভাবে q2 আধানের দ্বারা সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্র q। আধানের উপর বল প্রয়োগ করবে। অর্থাৎ তড়িৎ ক্ষেত্র তড়িৎ বল সৃষ্টির জন্য অড়বর্তী ভুমিকা পালন করে।
তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য (Intensity of Electric Field )
তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য সম্পর্কে জানার আগে আমরা পরীক্ষণীয় আধান কি তা জেনে নেই। পরীক্ষণীয় আধান বা টেষ্ট চার্জ একটি অতিক্ষুদ্র মানের কাল্পনিক আধান যা চারপাশের অন্য কোনো আধানকে প্রভাবিত করে না বা তার উপর কোনো বল প্রয়োগ করে না ।
আমরা পূর্বেই জেনেছি যে, তড়িৎক্ষেত্রের সকল বিন্দুতে আহিত বস্তু কর্তৃক সৃষ্ট প্রভাব সমান থাকে না। বিভিন্ন বিন্দুতে এর প্রভাব বিভিন্ন হয়। আহিত বস্তুর নিকটতম বিন্দুর জন্য এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি হবে। এ প্রভাব বোঝার জন্য তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একটি পরীক্ষাণীয় আধান স্থাপন করা হয়।
এখন পরীক্ষণীয় আধানের ওপর তড়িৎক্ষেত্র দ্বারা সৃষ্ট বল দ্বারা এই তড়িৎ প্রভাব পরিমাপ করা হয়। তড়িৎ ক্ষেত্রের বিভিন্ন বিন্দুতে পরীক্ষণীয় আধানটি স্থাপন করলে বিভিন্ন বিন্দুতে পরীক্ষণীয় আধানটি ভিন্ন ভিন্ন মানের বল অনুভব করে, আবার তড়িৎ ক্ষেত্রের একই বিন্দুতে ভিন্ন মানের পরীক্ষণীয় আধান স্থাপন করলে, পরক্ষণীয় আধান এবং আহিত বস্তুর মধ্যে ভিন্ন মানের বল ক্রিয়া করবে। এই পরীক্ষণীয় আধানটি হচ্ছে একক ধনাত্মক আধান অর্থাৎ এক কুলম্ব মানের একটি ধনাত্মক আধান।
তড়িৎ ক্ষেত্রের এই প্রভাব বা সবলতাকে যে রাশির সাহায্যে পরিমাপ করা হয় তাকে তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য বা সংক্ষেপে তড়িৎ প্রাবল্য বা তীব্রতা (Electric Field intensity or Electric Field Strength) বলে। একে E দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
তড়িৎ প্রাবল্য : তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একটি একক ধনাত্মক আধান স্থাপন করলে সেটি যে বল অনুভব করে তাকে ঐ বিন্দুর তড়িৎ প্রাবল্য বলে।
মান: তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে +q আধান যদি F বল অনুভব করে তাহলে ঐ বিন্দুতে তড়িৎ প্রাবল্যের মান হবে-
দিক: আমরা জানি তড়িৎ প্রাবল্য হলো একক ধনাত্মক আধানের ওপর ক্রিয়াশীল বল সুতরাং প্রাবল্যের দিক আছে এবং এটি একটি একটি ভেক্টর রাশি। এক ধনাত্মক আধান যে দিকে বল অনুভব করে তড়িৎ প্রাবল্যের দিক হয় সে দিকে। সুতরাং (১.৯) সমীকরণকে ভেক্টর রূপ লেখা যায়-
(১.৪) চিত্রে এ ধনাত্মক আধানে আহিত বস্তু হওয়ায় P বিন্দুতে অবস্থিত +q ধনাত্মক আধানটি PB বরাবর বিকর্ষণ বল অনুভব করবে। অতএব P বিন্দুতে তড়িৎ প্রাবল্যের দিক হবে PB বরাবর। কিন্তু A বস্তুটি যদি ঋণাত্মক আধান (চিত্র ১.৪) আহিত হয়, তবে P বিন্দুতে অবস্থিত ধনাত্মক আধানটি PA বরাবর আকর্ষণ বল অনুভব করবে, ফলে তড়িৎ প্রাবল্যের দিক হবে PA বরাবর ।
তড়িৎ ক্ষেত্র প্রাবল্যের একক: তড়িৎ বলের একক নিউটন এবং চার্জের একক কুলম্ব। অতএব তড়িৎ প্রাবল্যের একক নিউটন/কুলম্ব (newton/coulomb) সংক্ষেপে NC-1।
তড়িৎ প্রাবল্যের অন্য একটি একক ভোল্ট/মিটার (Vm’)।
বলের সাথে প্রাবল্যের সম্পর্ক : তড়িৎ প্রাবল্যের সংজ্ঞা থেকে আমরা পাই,
উপরের সমীকরণ থেকে বলা যায়, তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে অবস্থিত, আধানের ওপর ক্রিয়াশীল বল ঐ বিন্দুতে প্রাবল্য এবং ঐ আধানের গুণফলের সমান। ধনাত্মক আধান প্রাবল্যের অভিমুখে বল লাভ করে আর ঋণাত্মক আধান প্রাবল্যের বিপরীত দিকে বল লাভ করে।
তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুর প্রাবল্যের রাশিমালা (Expression for Electric Field Intensity due to a point charge)
মনে করি, K তড়িৎ মাধ্যমাঙ্ক বিশিষ্ট কোনো মাধ্যমের A বিন্দুতে একটি ধনাত্মক আধান +q অবস্থিত। এই আধান হতে r দূরত্বে P বিন্দুতে তড়িৎ প্রাবল্য নির্ণয় করতে হবে। (চিত্র ১.৫) P বিন্দুতে একটি পরীক্ষনীয় আধান q. স্থাপন করি। কুলম্বের সূত্রানুসারে q. আধানের উপর ক্রিয়াশীল বল।
দিক : Ē এর দিক হবে A ও B বিন্দুর সংযোজক সরল রেখা বরাবর। q আধানটি ধনাত্মক হওয়ায় E -এর দিক B বিন্দু থেকে BC বরাবর।
তড়িৎ প্রাবল্যের উপরিপাতন নীতি :
কোনো স্থানে একাধিক বিন্দু আধান স্থাপন করা হলে, সকল আধানের জন্য সৃষ্ট তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে লব্ধি প্রাবল্য নির্ণয় করার জন্য ঐ বিন্দুতে প্রতিটি আধানের জন্য পৃথকভাবে তড়িৎ প্রাবল্য নির্ণয় করতে হবে এবং নিট প্রাবল্য হবে পৃথকভাবে নির্ণীত প্রাবল্যগুলোর ভেক্টর সমষ্টি। একে তড়িৎ প্রাবল্যের উপরিপাতন বলে। কোন বিন্দুতে q1, 23, 3…… ইত্যাদি আধানের জন্য সৃষ্ট তড়িৎ প্রাবল্য যথাক্রমে,
চার্জের তল ঘনত্ব বা আধান ঘনত্ব (Suface Charge Density)
পরিবাহীতের আধানের অবস্থান
আমরা জানি, কোনো পরিবাহককে আধানের অবস্থান পরিবাহিকে আহিত করলে আধান পরিবাহীর অভ্যন্ড্ররে না ছড়িয়ে পরিবাহীর বাইরের পৃষ্ঠে অবস্থান করে। কিন্তু পরিবাহী পৃষ্ঠের সর্বত্র আধান সমান থাকে না। পৃষ্ঠের কোন অংশে কী পরিমাণ আধান থাকবে তা নির্ভর করে পরিবাহীর আকার, আকৃতি, অন্যান্য পরিবাহী বা অকের উপস্থিতির উপর।
সাধারণত পরিবাহীর যে অংশের বক্রতা বা তীক্ষ্মতা বেশি সে অংশে বেশি আধান অবস্থান করে। আধানের ঘনত্বের সাহায্যে পরিবাহকের অনেক বিভিন্ন অংশের আধান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
আধান ঘনত্ব
কোনো আহিত পরিবাহকের পৃষ্ঠের কোন বিন্দুর চারদিকে প্রতি একক ক্ষেত্রফলের উপরস্থ আধানের পরিমাণকে ঐ বিন্দুতে আধান ঘনত্ব হবে। একে আধানের তলমাত্রিক বা পৃষ্ঠমাত্রিক ঘনত্ব বলে।
মনে করি, কোন তলের ক্ষেত্রফল A এবং ঐ তলে আধানের মোট পরিমাণ Q হলে উক্ত তলে আধান ঘনত্ব,
কোনো আধানের ঘনত্ব 3 Cm” বলতে বোঝায়, ঐ তলে প্রতি বর্গমিটার ক্ষেত্রফলে 3 কুলম্ব আধান আছে ।
আধানের ঘনত্বের সাথে তড়িৎ প্রাবল্যের সম্পর্ক:
ধরা যাক, r ব্যাসার্ধের একটি গোলক K তড়িৎ মাধ্যমাঙ্ক বিশিষ্ট কোনো মাধ্যমে অবস্থিত, +Q পরিমাণ আধান গোলকটির পৃষ্ঠে সুষমভাবে বণ্টিত থাকলে ঐ আধানকে ঐ গোলাকার পরিবাহীর কেন্দ্রে অবস্থিত বিন্দু আধান হিসেবে বিবেচনা করা যায়। সুতরাং গোলকটির পৃষ্ঠে তড়িৎ প্রাবল্য হবে
আবার, কোনো আহিত পরিবাহীর প্রতি একক ক্ষেত্রফল আধানের পরিমাণকে এর আধান ঘনত্ব ০ বলে। যেহেতু পরিবাহীর পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল A= 4rr” । সুতরাং এর পৃষ্ঠে আধান ঘনত্ব হবে,
পরিবাহীকে গোলাকার ধরে (১.১৯) বা (১.২০) সমীকরণগুলো প্রতিপাদন করা হলেও যেকোনো আহিত পরিবাহীর পৃষ্ঠে তড়িৎ প্রাবল্য নির্ণয়ের জন্য এ সমীকরণগুলো ব্যবহার করা যায়।
তড়িৎ বলরেখা(Electric Lines of Force)
বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎক্ষেত্র সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট করার জন্য তড়িৎ বলরেখার অবতারণা করেন। একটি ধনাত্মক আধানকে কোনো তড়িৎক্ষেত্রে স্থাপন করলে এটি বল লাভ করবে। আধানটি মুক্ত হলে, এটি বল লাভের ফলে স্থির না থেকে একটি নির্দিষ্ট পথে চলবে। ধনাত্মক আধানটির এই চলার পথই বলরেখা। তড়িৎ বলরেখার বা কোনো অস্তিত্ব নেই।
এ রেখাগুলো কাল্পনিক বলরেখা থেকে তড়িৎ প্রাবল্যের ধারণা পাওয়া যায়। তড়িৎ বলরেখার কোনো বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শক ঐ বিন্দুতে একটি ধনাত্মক আধানের উপর ক্রিয়াশল লব্ধি বলের দিক অর্থাৎ প্রাবল্যের দিক নির্দেশ করে। তড়িৎ বলরেখার সাথে লম্বভাবে স্থাপিত কোনো তলের একক ক্ষেত্রফলের মধ্য দিয়ে অতিক্রাড় বলরেখার সংখ্যা তড়িৎ প্রাবল্যের সমানুপাতিক ।
তড়িৎ বলরেখার ধর্ম: তড়িৎ বলরেখার ধর্ম নিম্নে বর্ণনা করা হলো:
১. তড়িৎ বলরেখা খোলা বক্র রেখা।
২. তড়িৎ বলরেখাগুলো ধনাত্মক আধান থেকে উৎপন্ন হয়ে ঋণাত্মক আধানে শেষ হয়। পরিবাহীর অভ্যস্ত্ররে কোনো বলরেখা থাকে না ।
৩. বলরেখাগুলো পরস্পরকে ছেদ করে না ।
৪. বলরেখাগুলো পরস্পরের উপর পার্শ্বচাপ প্রয়োগ করে ।
৫. বলরেখাগুলো স্থিতিস্থাপক বস্তুর মতো দৈর্ঘ্য বরাবর সংকুচিত হয়।
৬. বলরেখাগুলো ধনাত্মক আধানে আহিত পরিবাহীর পৃষ্ঠ থেকে লম্বভাবে বের হয় আর ঋণাত্মক পরিবাহীর পৃষ্ঠের সাথে লম্বভাবে প্রবেশ করে।
কয়েকটি তড়িৎ বলরেখার মানচিত্র
নিচে কয়েকটি তড়িৎক্ষেত্রের বলরেখা বর্ণনা করা হলো, আলোচনার সুবিধার্থে পরিবাহীগুলোকে গোলাকার ধরা হয়েছে:
১. একটি পৃথক ধনাত্মক আধানের জন্য বলরেখার চিত্র (১.৬ক)। এক্ষেত্রে বলরেখাগুলো পরিবাহীর পৃষ্ঠ থেকে লম্ব বরাবর সুষমভাবে বের হয়েছে।
২. একটি পৃথক ঋণাত্মক আধানের জন্য বলরেখার (চিত্র ১.৬খ)। এক্ষেত্রে বলরেখাগুলো পরিবাহীর পৃষ্ঠে লম্ব বরাবর সুষমভাবে প্রবেশ করে।
৩. দুটি সমান ও বিপরীতধর্মী আধানের জন্য সৃষ্ট তড়িৎ ক্ষেত্রের বলরেখা (চিত্র ১.৬গ)। এক্ষেত্রে বলরেখাগুলো ধনাত্মক আধান থেকে বের হয়ে ঋণাত্মক আধানে প্রবেশ করে ।
৪. দুটি ধনাত্মক সমান আধানের জন্য বলরেখা (চিত্র ১.৬ঘ)। এক্ষেত্রে বলরেখাগুলো পরস্পর থেকে দূরে সরে যাবে, ফলে দুই আধানের মাঝখানে কোনো বলরেখা থাকে না, এ স্থানকে চিত্রে X চিহ্ন দিয়ে দেখানো হয়েছে। এ স্থানে কোনো আধান স্থাপন করলে সেটি কোনো বল লাভ করবে না, এ বিন্দুকে নিরপেক্ষ বিন্দু বলে।
৫. সমান মানের দুটি ঋণাত্মক আধান পাশাপাশি স্থাপন করলে (চিত্র ১.৬৫), উপরে বর্ণিত পাশাপাশি দুটি ধনাত্মক আধানের মত একই আচরণ প্রদর্শন করবে।
৬. দুটি অসমান ধনাত্মক আধানের জন্য সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্রে বলরেখা (চিত্র ১.৬চ)। এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ বিন্দু N ক্ষুদ্রতর আধানের নিকটবর্তী হয়।
সুষম তড়িৎক্ষেত্র (Uniform Electric Field)
কোনো তড়িৎক্ষেত্রের সকল বিন্দুতে যদি তড়িৎ প্রাবল্যের মান সমান ও দিক একই হয়, তবে ঐ তড়িৎক্ষেত্রকে সুষম তড়িৎক্ষেত্র বলে। সুষম তড়িৎক্ষেত্রের বলরেখাগুলো পরস্পর সমান্ডুরাল ও সম-ঘনত্ববিশিষ্ট হয়, সমঘনত্বের সমাাল সরলরেখা এঁকে তাতে একই দিকে তীরচিহ্ন দিয়ে সুষম তড়িৎক্ষেত্র নির্দেশ করা হয় (চিত্র ১.৭)। কোন আধান থেকে বহু দূরে খুব অল্প জায়গাকে সুষম তড়িৎক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
তড়িৎ বিভব (Electric Potential )
দুটি আহিত বস্তুকে একটি পরিবাহী তার দ্বারা সংযোগ করলে তাদের মধ্যে আধানের আদান-প্রদান হতে পারে। কিন্তু আহিত বস্তু দুটির কোনটি হতে কোটিতে আধান যাবে তা বস্তু দুটির আধানের পরিমাণের উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে বস্তুদ্বয়ের তড়িৎ অবস্থার ওপর।
সুতরাং যে তড়িতাবস্থা আহিত বস্তু দুটির মধ্যে আধানের আদান-প্রদানের দিক নির্ধারণ করে তাকে তড়িৎ বিভব বলে। বস্তু দু’টির মধ্যে বিভব পার্থক্য থাকলে অর্থাৎ তড়িৎ সাম্যাবস্থা সৃষ্টি না হওয়া পর্যড় আধানের প্রবাহ চলতে থাকবে। যে আহিত বস্তুর বিভব বেশি তা থেকে কম বিভবের বস্তুতে ধনাত্মক আধান প্রবাহিত হবে। অন্যভাবে কম বিভবের পরিবাহী হতে বেশি বিভবের পরিবাহীতে ঋণাত্মক আধান প্রবাহিত হবে।
তরল পদার্থের উচ্চতার সাথে তড়িৎ বিভবের সাদৃশ্য
১.৮ চিত্রে A ও B দুটি পাত্র একটি সংযোগ নল দ্বারা যুক্ত আছে। সংযোগ নলটি স্টপ কক- C- এর মাধ্যমে খোলা বা বন্ধ করা যায়। সংযোগ নল বন্ধ রেখে A ও B পাত্রে পানি ঢালা হয়। A পাত্রের ব্যাস কম থাকায় এতে অল্প পানি ঢালা হলেও পানির উচ্চতা অধিক হবে। A পাত্রে এ যে পরিমাণ পানি ঢালা হয়েছে, একই পরিমাণ পানি B পাত্রে ঢাললেও, B পাত্রে পানির উচ্চতা A পাত্রের পানির উচ্চতার চেয়ে কম হবে, এখন স্টপ কক C খুলে দিলে পানি A পাত্র থেকে B পাত্রে প্রবাহিত হবে।
উভয় পাত্রে পানির উচ্চতা সমান না হওয়া পর্যড় এ প্রবাহ চলতে থাকবে। পানি কোন্ দিক থেকে কোন্ দিকে প্রবাহিত হবে তা নির্ভর করবে পানির উপরিতলের উচ্চতার উপর। সুতরাং এ থেকে বোঝা যায় যে, পানির প্রবাহ নির্ভর করছে মোট পানির পরিমাণের উপর নয় এবং নির্ভর করছে পানির উচ্চতার উপর।
একইভাবে দুটি আহিত বস্তুর ক্ষেত্রে আধান কোনদিকে প্রবাহিত হবে তা নির্ভর করে বস্তুর বিভবের ওপর, বস্তু দুটির আধানের পরিমাণের উপর নয়। সংজ্ঞা: বিভব হচ্ছে আহিত পরিবাহীর তড়িৎ অবস্থা যা অন্য পরিবাহীর সঙ্গে তড়িৎগতভাবে সংযোগ দিলে আধান আদান- প্রদান করবে কিনা তা এবং প্রবাহের দিক নির্ণয় করে।
পৃথিবীর তড়িৎ বিভব:
কোনো আহিত বস্তুকে পৃথিবীর সাথে যুক্ত করলে বস্তুটি নিাড়িত বা আধান নিরপেক্ষ হয়, ধনাত্মক আধানে আহিত বস্তুকে ভু-সংযুক্ত করলে পৃথিবী থেকে ইলেকট্রন এসে বস্তুটিকে নি ড়িত করে। আবার ঋণাত্মকভাবে আহিত বস্তুকে পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত করলে বস্তু থেকে ইলেকট্রন ভূমিতে চলে যায়। ফলে বস্তুটি নিড়াড়িত হয়।
পৃথিবী এত বড় যে, এতে ইলেকট্রন যুক্ত হলে বা এ থেকে ইলেকট্রন চলে গেলে এর বিভবের আদৌ কোনো পরিবর্তন হয় না। পৃথিবী প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বস্তু থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করছে এবং বিভিন্ন বস্তুতে ইলেকট্রন প্রদানও করছে। ফলে পৃথিবীকে বিভবশূন্য মনে করা হয় এবং ভু-সংযুক্ত পরিবাহীর বিভবও শূন্য ধরা হয়। উলেণ্টখ্য যে, বিভব নির্ণয়ের সময় পৃথিবীর বিভবকে শূন্য ধরা হয়।
শূন্য, ধনাত্মক ও ঋণাত্মক বিভব :
কোনো আহিত পরিবাহীকে ভূ-সংযুক্ত করলে তার বিভব শূন্য হয়। সংযুক্ত অবস্থায় পৃথিবী ও পরিবাহী একত্রে একটি পরিবাহীতে পরিণত হয়। আধানহীন পরিবাহীর বিভবকে শূন্য ধরা হয়। ধনাত্মক আধানে আহিত পরিবাহীর বিভব ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক আধানে আহিত পরিবাহীর বিভব ঋণাত্মক।
একটি পরিবাহী ধনাত্মক আধানে এবং অপরটি ঋণাত্মক আধানে আহিত। ধনাত্মক আধানে আহিত বস্তুটির বিভব উচ্চ এবং ঋণাত্মক আধানে আহিত বস্তুটির বিভব নিম্ন আধানের প্রবাহ সবসময়ই উচ্চ বিভব থেকে নিম্ন বিভবের দিকে হবে।
দুটি পরিবাহীই যদি ধনাত্মক আধানে আহিত হয় সেক্ষেত্রে যে পরিবাহীতে ঋণাত্মক আধানের পরিমাণ কম সেটির বিভব উচ্চ এবং যে পরিবাহীতে ঋণাত্মক আধানের পরিমাণ বেশি সেটির বিভব নিম্ন হবে।
আমরা জানি, আধান সর্বদা উচ্চ বিভব থেকে নিম্ন বিভবে প্রবাহিত হয় সুতরাং এদেরকে যদি পরিবাহী তার দ্বারা সংযুক্ত করা হয় তবে কম ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট পরিবাহী থেকে বেশি ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট পরিবাহীর দিকে তড়িৎ প্রবাহিত হবে।

তড়িৎ ক্ষেত্রের বিভব (Potential of Electric Field)
আমরা জানি, একটি আহিত বস্তুর চারপাশে যে অঞ্চল জুড়ে এর প্রভাব থাকে তাকে ঐ আহিত বস্তুটির তড়িৎক্ষেত্র বলে। তড়িৎক্ষেত্রের প্রতিটি বিন্দুর যেমন প্রাবল্য থাকে তেমনি বিভবও থাকে। তড়িৎ প্রাবল্য থেকে আমরা জানতে পারি, তড়িৎক্ষেত্রের কোন বিন্দুতে আধান স্থাপন করলে সেটি কোন দিকে এবং কত বল লাভ করব।
তড়িৎ বিভব থেকে আমরা জানতে পারি, তড়িৎ ক্ষেত্রে একটি মুক্ত আধান স্থাপন করলে সেটি কোন দিকে চলবে, ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী আধানের দিকে নাকি ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী আধান থেকে দূরে সরে যাবে ।
কোনো আহিত বস্তুর তড়িৎক্ষেত্রের মধ্যে একটি আধানকে এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে স্থাপন করলে কিছু কাজ সম্পাদিত হয়। তড়িৎক্ষেত্রটি যদি ধনাত্মক আধান দ্বারা সৃষ্ট ক্ষেত্রে হয় তবে অন্য একটি ধনাত্মক আধানকে বস্তুর দিকে আনতে বিকর্ষণ বলের বির“দ্ধে কাজ করতে হয়। অন্যদিকে তড়িৎক্ষেত্র সৃষ্টিকারী আধানটি যদি ঋণাত্মক হয়, তবে ধনাত্মক আধানকে বস্তুর দিকে আনতে আকর্ষণ বল দ্বারা কাজ সম্পন্ন হবে।
সংজ্ঞা: শূন্য বিভবের কোনো স্থান থেকে বা অসীম দূরত্ব থেকে একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয়, তাকে ঐ বিন্দুর তড়িৎ বিভব বা বিভব বলে ।
মনে করি, অসীম দূরত্ব থেকে একটি পরীক্ষণীয় আধান q কে তড়িৎক্ষেত্রের কোন বিন্দুতে আনতে W পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয়, ঐ বিন্দুর বিভব / হলে,
তড়িৎ বিভব স্কেলার রাশি, বিভবের একক জুল/কুলম্ব (JC)। SI পদ্ধতিতে বিভবের এককু ভোল্ট (V)
আধান q=1 কুলম্ব (C) হলে যদি কাজ W=1 জুল (J) হয় তাহলে বিভব /=1 ভোল্ট (V) হয়।
ভোল্ট: অসীম দূরত্ব থেকে এক কুলম্ব (IC) ধনাত্মক আধানকে তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যদি এক জুল (1J) কাজ সম্পন্ন হয়, তবে ঐ বিন্দুর বিভবকে এক ভোল্ট (IV) বলে ।
তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুর বিভব 16V বলতে বোঝায়, অসীম দূরত্ব থেকে প্রতি কুলম্ব ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের ঐ বিন্দুতে আনতে 25J কাজ সম্পাদিত হয়।
বিভব পার্থক্য (Potential Difference)
মনে করি, কোনো তড়িৎক্ষেত্রের মধ্যে A ও B দুটি বিন্দু। এদের মধ্যবর্তী দূরত্ব । এবং বিভব যথাক্রমে VA এবং VB [চিত্র ১.৯]। বিভবের সংজ্ঞানুসারে অসীম থেকে একক ধনাত্মক আধানকে A বিন্দুতে আনতে কাজের পরিমাণ VA এবং B বিন্দুতে আনতে কাজের পরিমাণ VB । অতএব প্রতি একক ধনাত্মক আধানকে B বিন্দু থেকে A বিন্দুতে আনতে কাজের পরিমাণ VA-VB অর্থাৎ ঐ দুই বিন্দুর (A ও B ) বিভব পার্থক্য।
সংজ্ঞাঃ প্রতি একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে স্থানাস্ত্র করতে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয় তাকে ঐ দুই বিন্দুর বিভব পার্থক্য বলে। বিভব পার্থক্যের এক ভোল্ট (V) ।
বিভব পার্থক্য ও কাজের মধ্যে সম্পর্ক (Relation Between Potential Difference and Work)
(১.২৩) সমীকরণে q, VA ও VB এর মান বসালে কাজ এর মান পাওয়া যাবে। W যদি ধনাত্মক হয় তবে বুঝতে হবে বাহ্যিক বল দ্বারা কাজ করতে হবে, আর যদি W-এর মান ঋণাত্মক হয় তবে বুঝতে হবে তড়িৎক্ষেত্রই কাজ করবে।
ইলেকট্রন ভোল্ট (Electron Volt) বা eV
কাজ বা শক্তির একটি একক হলো ইলেকট্রন ভোল্ট। সাধারণত পারমাণবিক ও নিউক্লিয় পদার্থবিদ্যায় শক্তির এই একক ব্যবহার করা হয়।
সংজ্ঞা: 1V বিভব পার্থক্যের দুটি বিন্দুর একটি থেকে অন্যটিতে একটি ইলেকট্রন স্থানা করতে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয় তাকে এক ইলেকট্রন ভোল্ট বা সংক্ষেপে 1eV বলে ।
তড়িৎ প্রাবল্য ও বিভব পার্থক্যের মধ্যে পার্থক্য (Relation Between Intensity of Electric Field and Potential Difference)
কোনো তড়িৎক্ষেত্রের মধ্যে A ও B দুটি বিন্দুর বিভব যথাক্রমে VA ও VB [চিত্র ১.৯]। এদের মধ্যবর্তী দূরত্ব r।
এখানে, Va−VB =B বিন্দু থেকে A বিন্দুতে এক ধনাত্মক আধান আনতে কাজের পরিমাণ।
=B বিন্দু থেকে A বিন্দুতে একক ধনাত্মক আধান আনতে তার ওপর ক্রিয়াশল বলের মান × আধানের সরণের মান
= তড়িৎ প্রাবল্য x বিন্দুদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব
বিন্দু আধান কর্তৃক সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে বিভবের রাশিমালা (Potential at a point in the electric field due to a point charge)
মনে করি, K তড়িৎ মাধ্যমাঙ্কের একটি মাধ্যমের A বিন্দুতে একটি ক্ষুদ্র পরিবাহী অবস্থিত যার আধান +q+q আধান দ্বারা সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্রের A বিন্দু থেকে r দূরত্বে B বিন্দুতে বিভব V নির্ণয় করতে হবে [চিত্র ১.১০(ক)]। মনে করি B বিন্দুতে একটি একক ধনাত্মক আধান স্থাপন করা হলো। এখন A বিন্দুতে অবস্থিত +q আধানের জন্য B বিন্দুতে স্থাপিত একক ধনাত্মক আধানের ওপর বল তথা তড়িৎ প্রাবল্য হবে,
এখন এ ধনাত্মক আধানকে B বিন্দু থেকে A বিন্দুর দিকে BA বরাবর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দূরত্ব dr সরাতে অর্থাৎ D বিন্দুতে স্থাপন করতে সম্পাদিত কাজের পরিমাণ এ দুই বিন্দুর বিভব পার্থক্য dV এর সমান।
একাধিক আধানের জন্য সৃষ্ট তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুর বিভব :
ধরি, K তড়িৎ মাধ্যমাঙ্কবিশিষ্ট কোনো মাধ্যমের বিভিন্ন বিন্দুতে q1, 92, 93 …. … আধান অবস্থিত। মাধ্যমের উপর P একটি বিন্দু এবং এ আধানগুলোর জন্য P বিন্দুতে বিভব নির্ণয় করতে হবে, [চিত্র : ১.১০(খ)]।
ধরি, P বিন্দু থেকে 11, 2, 3 ………….. দূরত্বে আধান 91, 92, 93… ….. অবস্থিত এবং এ সকল আধানের জন্য P বিন্দুতে বিভব হবে যথাক্রমে-
চার্জিত গোলকের বিভব (Potential of a Charged Sphere)
মনে করি, A একটি ফাঁপা গোলক যার ব্যাসার্ধ । এবং এটি K একটি তড়িৎ মাধ্যমাঙ্কের কোন মাধ্যমে অবস্থিত।
এখন গোলকটিকে +q পরিমাণ আধান দিলে গোলকটি ধনাত্মকভাবে আহিত হবে। এ আধান গোলক পৃষ্ঠের সর্বত্র সমভাবে বণ্টিত হবে। ফলে গোলকের পৃষ্ঠ থেকে বলরেখাগুলো লম্বভাবে ব্যাসার্ধ বরাবর বাইরের দিকে বের হবে [চিত্র ১.১১(ক)]।
এ সকল বলরেখাগুলোকে পিছনের দিকে বাড়ালে এগুলো গোলকের কেন্দ্রে মিলিত হবে। এখানে যদি ধরা হয়, +q আধান গোলকের কেন্দ্রে অবস্থিত আছে, তাহলেও বলরেখাগুলো একইভাবে বের হবে অর্থাৎ চিত্র [১.১১(ক)] এর রূপ নিবে [চিত্র ১.১১ (খ)]
সুতরাং বোঝা যায় যে, q আধান গোলকের পৃষ্ঠে থাকলে অথবা গোলকের কেন্দ্রে অবস্থিত থাকলে বলরেখাগুলো একইরূপ হয়। অর্থাৎ q আধান গোলকের পৃষ্ঠে থাকলে যে তড়িৎক্ষেত্র সৃষ্টি করে, q আধান গোলকের কেন্দ্রে অবস্থিত থাকলেও একই তড়িৎক্ষেত্রের সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে q আধান গোলকের পৃষ্ঠে স্থাপিত হলেও এই আধানকে গোলকের কেন্দ্রে কেন্দ্রীভূত বলে বিবেচনা করা যায়। সুতরাং গোলকের পৃষ্ঠে কোনো বিন্দুতে বিভব হবে,
সমবিভব তল (Equipotential Surface)
সমবিভব তল তড়িৎক্ষেত্রের মধ্যে এমন একটি তল যার সকল বিন্দুতে তড়িৎ বিভবের মান সমান বা অভিন্ন থাকে, এ তলে সকল বিন্দুতে বিভবের মান সমান থাকায় একটি একক ধনাত্মক আধানকে তলের এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে নিতে কোনো কাজের প্রয়োজন হয় না। কারণ বৈদ্যুতিক কাজ সম্পাদন করতে হলে বিন্দু দুটির মধ্যে বিভব পার্থক্য থাকা প্রয়োজন।
সমবিভব তলে বিন্দু দুটির বিভব পার্থক্যের মান শূন্য। বিভব পার্থক্য না থাকায় সমবিভব তলে তড়িৎ প্রবাহিত হয় না। চিত্র ১.১২ এ একটি চার্জিত গোলীয় পরিবাহীর চারদিকে কয়েকটি সমবিভব তল দেখানো হয়েছে। সমবিভব তলগুলো গোলীয় এবং বলরেখাগুলি সমবিভব তলের সাথে অভিলম্ব হবে। চিত্রে P সমবিভব তল, P একটি পরিবাহীর কেন্দ্র থেকে r দূরত্বে অবস্থিত। পরিবাহীর কেন্দ্রে +q আধান আছে। সুতরাং P তলের উপর সব বিন্দুতে
গাণিতিক উদহারণ ১.৪ । 1.6×10°C আধানে আহিত একটি ক্ষুদ্র গোলককে বায়ুতে স্থাপন করা হলো। বাহিত গোলকের কেন্দ্র হতে 0.15m দূরে কোনো বিন্দুতে তড়িৎ প্রাবল্য নির্ণয় করন।
গাণিতিক উদাহরণ ১.৫। একটি ইলেকট্রনকে অভিকর্ষীয় ক্ষেত্রে স্থির রাখতে হলে কী পরিমাণ তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রয়োজন হবে? কিন্তু তড়িৎ বল ও ইলেকট্রনের ওজন সমান হলে ইলেকট্রনটি স্থির থাকবে ।
গাণিতিক উদাহরণ ১.৬। 2m বাহুবিশিষ্ট সমবাহু ত্রিভুজের দুই কৌণিক বিন্দুতে 2 কুলম্ব মানের দুটি চার্জ স্থাপিত আছে। তৃতীয় কৌণিক বিন্দুতে প্রাবল্যের মান নির্ণয় করন।
গাণিতিক উদাহরণ ১.৭। দুটি ক্ষুদ্র গোলক A ও B তে যথাক্রমে +4C ও +9C চার্জ আছে। যদি গোলকদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব 30 cm হয়, তবে এদের সংযোজক সরলরেখার কোন বিন্দুতে উভয় চার্জের জন্য তড়িৎ প্রাবল্যের মান সমান হবে?
উদাহরণ ১.৮। বায়ুতে একটি বর্গক্ষেত্রের তিনটি কৌণিক বিন্দুতে যথাক্রমে +2×10°C, – 1×10°C এবং +8×10°C আধান স্থাপন করা হলো। চতুর্থ কৌণিক বিন্দুতে কত আধান স্থাপন করলে বর্গক্ষেত্রের কেন্দ্রে বিভব শূন্য হবে? বর্গক্ষেত্রের কেন্দ্র থেকে প্রতিটি কৌণিক বিন্দুর দূরত্ব সমান ।
ধরা যাক, এই দূরত্ব r ।
গাণিতিক উদাহরণ ১.৯। একটি গোলাকার পরিবাহীর ব্যাসার্ধ 0.5m এবং তাকে 10 C আধান দেয়া আছে। গোলকের কেন্দ্র হতে 1m এবং 0.1m দূরত্বে তড়িৎ বিভবের মান বের করন।
গোলকের পৃষ্ঠে স্থাপিত আধান তার কেন্দ্রে অবস্থিত বলে বিবেচনা করা হয়।
v = ?
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, যে বিন্দুতে বিভব নির্ণয় করতে হবে সে বিন্দুটি গোলকের ভেতরে অবস্থিত। গোলকের ভেতরে বিন্দুতে বিভব গোলকের পৃষ্ঠের বিভবের সমান। তাই এক্ষেত্রে 0.1m এর পরিবর্তে দূরত্ব গোলকের ব্যাসার্ধ অর্থাৎ 0.5 ধরতে হবে।
সার-সংক্ষেপ :
তড়িৎ ক্ষেত্র : একটি আহিত বস্তুর চারপাশে যে অঞ্চলব্যাপী তার প্রভাব বিদ্যমান থাকে অর্থাৎ অন্য কোন আহিত বস্তু স্থাপনে সেটি আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল লাভ করে, সে অঞ্চলকে ঐ আহিত বস্তুর তড়িৎ বলক্ষেত্র বা তড়িৎ ক্ষেত্ৰ বলে।
তড়িৎ প্রাবল্য : তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একটি একক ধনাত্মক আধান স্থাপন করলে সেটি যে বল অনুভব করে তাকে ঐ বিন্দুর তড়িৎ প্রাবল্য বলে।
তড়িৎ প্রাবল্য, E=F/q
তড়িৎ বিভব : শূন্য বিভবের কোনো স্থান থেকে বা অসীম দুরত্ব থেকে একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয়, তাকে ঐ বিন্দুর তড়িৎ বিভব বা বিভব বলে।
আরও দেখুনঃ