[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

নিউটনীয় মেকানিক্স

নিউটনীয় মেকানিক্স পদার্থবিজ্ঞানে খুব জনপ্রিয় এবং প্রয়োজনীয় একটি বিষয় । ধরুন আপনি একটি স্থির বলকে কিক করলেন। তা সহজেই সামনের দিকে গতিশীল হবে।

নিউটনীয় মেকানিক্স

একটি থেমে থাকা প্রাইভেট কারকে যদি একই ভাবে ধাক্কা দিয়ে গতিশীল করার চেষ্টা করেন, তা কিন্তু এতো সহজে গতিশীল হবে না।

[ নিউটনীয় মেকানিক্স ]

নিউটনীয় মেকানিক্স Newtonian mechanics 3 নিউটনীয় মেকানিক্স

আবার ধরুন একটি ছোট সাইকেল চালিয়ে একটি বাচ্চা সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, কোন চলন্ত ট্রাক দেখতে পেলেন আপনি, সাইকেলটিকে পেছন থেকে টেনে ধরলেন, তাকে সহজেই থামা্তে পারবেন আপনি কিন্তু চলন্ত ট্রাকটিকে চাইলেই এতো সহজে থামা্তে পারবেন না। এক্ষেত্রে বল, প্রাইভেট কার, ছোট সাইকেল এবং ট্রাকের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ক্রিকেট বল এবং ছোট সাইকেল উভয়ের ভর কম এবং প্রাইভেট কার কিংবা ট্রাক, উভয়ের ভর অত্যন্ত বেশি। উপরন্তু, ক্রিকেট বলকে গতিশীল করা এবং ছোট সাইকেলকে থামানো সহজ কিন্তু প্রাইভেট কারকে গতিশীল করা কিংবা ট্রাককে থামানো কঠিন।

অন্যভাবে বলতে গেলে, ট্রাক তার গতিশীলতা এবং প্রাইভেট কার তার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অধিকতর প্রবনতা প্রদর্শন করছে যেখানে ক্রিকেট বল তার স্থিতি শীলতা এবং ছোট সাইকেল তার গতিশীলতা সংরক্ষণে বিপরীত ধর্ম প্রদর্শন করে। এ উদাহরণ গুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে যে অপেক্ষাকৃত বেশি ভরের বস্তুর নিজের অবস্থা বজায়ে রাখার প্রবনতা বেশি। বস্তুর নিজের অবস্থা বজায়ে রাখতে চাওয়ার যে প্রবনতা একে পদার্থ বিজ্ঞানে জড়তা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। কোন বস্তুর ভর যত বেশি, তার জড়তা তত বেশি হয়ে থাকে। আবার বস্তুর ভর যত কম, তার জড়তা তত কম।জড়তা মূলত বস্তুর ভরের পরিমাপ।

১৬৮৭ সালে, স্যার আইজাক নিউটন তার বিখ্যাত গ্রন্থ “ন্যাচারালিস, ফিলোসফিয়া প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা” বইতে তিনটি সূত্র প্রদান করেন। সূত্র তিনটিতে তিনি বস্তুর ভর তথা জড়তা ,গতি ও বলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে দেখান। এই সূত্র তিনটিকে নিউটনের গতিসুত্র নামে আখ্যায়িত করা হয়। এবং এই সূত্র গুলোই নিউটনীয়ান পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি প্রদান করেছে।

নিউটনীয় মেকানিক্স Newtonian mechanics 4 নিউটনীয় মেকানিক্স

নিউটনীয় পদার্থবিদ্যাকে নিউটনিয়ান বা ক্লাসিক্যাল মেকানিক্স ও বলা হয়।নিউটনিয় বলবিদ্যায় নিত্যদিনের বিভিন্ন ঘটনাগুলোর বল, ভর, বেগ, জড়তা ইত্যাদি এবং প্রযুক্ত শক্তি বা কৃত কাজ নিয়ে পর্যালোচনা এবং সম্পর্ক স্থাপন করা হয়ে থাকে।পরবর্তীতে অন্যান্য বিজ্ঞানীদের দ্বারা বিকশিত বেশ কিছু ধারণা, বিশেষ করে শক্তির ধারণাও নিউটনীয় বলবিদ্যার অংশ হিসেবে আলোচনা করা হয়।

নিউটনীয় মেকানিক্স Newtonian mechanics 3 নিউটনীয় মেকানিক্স

নিউটনীয় পদার্থবিদ্যা্র বিভিন্ন সূত্রের সাহায্যে মহাবিশ্বের বেশিরভাগ বস্তুর গঠন ও কার্যকলাপ ব্যাখ্যা করা সম্ভব। বিশেষত বৃহৎ আকৃতির বস্তুর ক্ষেত্রে নিউটনীয় বলবিদ্যার সূত্রগুলো সঠিক ভাবে কার্যকর হয়। অত্যন্ত ক্ষুদ্র পদার্থ সমূহ, যেমন ইলেক্ট্রন প্রোটন নিউট্রন এর ক্ষেত্রে নিউটনের গতিসূত্র এবং নিউটনীয়ান বলবিদ্যার সূত্রগুলো প্রযোজ্য নয়। যেসব বস্তুর বেগ আলোর বেগের কাছাকাছি, তাদের ক্ষেত্রেও নিউটনীয়ান বলবিদ্যার বদলে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব ব্যাবহৃত হয়ে থাকে।

বস্তুর ত্বরণ যদি অত্যন্ত কম যেমন কোন বস্তুর ত্বরণ ১০-১০ মিটার প্রতি সেকেন্ড বা তার চেয়ে কম হয়ে থাকলে তখন নিউটনের গতিসূত্র প্রয়োগ সম্ভব হয় না। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বিজ্ঞানীরা এটি আবিষ্কার করেন যে যে সব ক্ষেত্র গুলোতে নিউটনীয়ান বলবিদ্যার সাহায্যে সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব হয় না, সেসব ক্ষেত্র গুলোয়, আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা ব্যাবহার করে সহজেই ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব।

কিন্তু নিউটনীয়ান পদার্থবিজ্ঞানের দ্বারা গাণিতিক সমস্যা সমাধান করা অপেক্ষাকৃতভাবে সহজ হওয়ায় এটি যন্ত্রের যন্ত্রাংশ, তরল পদার্থ এবং বুলেট থেকে মহাকাশযান, গ্রহ এবং ছায়াপথ পর্যন্ত প্রায় সব বস্তুর গতি গণনা করার জন্য মানদণ্ড হিসেবে রয়ে গেছে।

কোন বস্তুর গতিশীলতা বা স্থিতিশীলতা পরিবর্তণ করার ক্ষেত্রে তাহলে একটা বিশেষ কিছু প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে, এই বিশেষ কিছু, যা প্রয়োগ করলে স্থিতিশীল বস্তু গতিশীল হয় বা হতে চায় কিংবা কোন গতিশীল বস্তু স্থিতিশীল হয় বা হতে চায়, তাকেই পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় বল বলা হয়।

নিউটনের প্রথম সুত্র মূলত আমাদের বল ও জড়তার ধারণার সাথে পরিচিতি দেয়। এই সূত্রানুসারে, “বাহ্যিক বল প্রয়োগ না করা হলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকে এবং গতিশীল বস্তু সমদ্রুতিতে সরলপথে চলতে থাকবে।” অর্থাৎ কোন বস্তুকে গতিশীল করার জন্য যেমন বলের প্রয়োজন তেমনি গতিশীল বস্তুর স্থিতিশীলতা আনার জন্যেও বলের প্রয়োজন।

নিউটনীয় মেকানিক্স Newtonian mechanics 1 নিউটনীয় মেকানিক্স

নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র বল ও বস্তুর ভরবেগের মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করে। এ সূত্রানুসারে,”বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তণের হার, এর উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল প্রয়োগের দিক এবং ভরবেগের পরিবর্তণ এর দিক একই হয়। এই সম্পর্ক থেকেই পরবর্তিতে F=ma সমীকরণটি প্রতিপাদন করা সম্ভব হয়।

নিউটনীয় মেকানিক্স Newtonian mechanics 6 নিউটনীয় মেকানিক্স

নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুসারে, “প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।

নিউটনীয় মেকানিক্স Newtonian mechanics 7 নিউটনীয় মেকানিক্সনিউটনীয় মেকানিক্স Newtonian mechanics 2 নিউটনীয় মেকানিক্স

নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুসারে মহাজগতের সমস্ত বল জোড়ায় জোড়ায় থাকে। ক্রিয়া প্রযুক্ত হলে অবশ্যই প্রতিক্রিয়া থাকবে।
নিউটনের এই গতি সূত্র ব্যাবহার করে প্রাথমিকভাবে ঘোড়ার গাড়ির চলন, নৌকার গুণ টানা, বন্দুক থেকে গুলি ছোঁড়া, পাখির আকাশে উড়ার কৌশল সহ আরো অনেক নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।এছাড়া রকেটের গতি পর্যালোচলনার ক্ষেত্রেও নিউটনীয়ান বলবিদ্যার ব্যাবহার রয়েছে।

নিউটনীয়ান বলবিদ্যার সাহায্যে রৈখিক ভরবেগের নিত্যতা ও ভরবেগের সংরক্ষণ নীতি ব্যাবহার করে স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।এর দ্বারা বিভিন্ন দুর্ঘটনায় গাড়ির গতি ও ভর সগক্রান্ত রিপোর্ট তৈরী করা হয়। নিউটনীয়ান বলবিদ্যায় জড়তার ভ্রামক, কৌণিক গতি সংক্রান্ত রাশিসমূহ, যেমন কৌণিক সরণ, কৌণিক বেগ, কৌণিক ত্বরণ, কৌণিক ভরবেগ, ইত্যাদি এবং রৈখিক গতির অনুরুপ রাশিগুলোর সাথে এদের সম্পর্ক স্থাপন করা হয় যা পরবর্তিতে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যপক ভাবে ব্যাবহৃত হয়। টর্ক বা বলের ভ্রামক, কেন্দ্রমূখী এবং কেন্দ্রবিমুখী বল, রাস্তার ব্যাংকিং ইত্যাদি ক্ষেত্র পুরকৌশল এবং যন্ত্রকৌশল বিদ্যায় ব্যাপকভাবে ব্যাবহৃত হয়। রাস্তার ব্যাংকিং কোণ দূর্ঘটনা এড়াতে এবং দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় রাস্তার নকশায় মূল ভিত্তি রূপে ব্যাবহৃত হয়।

আরও পড়ুন:

1 thought on “নিউটনীয় মেকানিক্স”

Leave a Comment