আজকে আমরা প্রসঙ্গ কাঠামো সম্পর্কে আলোচনা করবো। যা বাউবি এইচএসসি ২৮৭১ পদার্থ বিজ্ঞান ২য় পত্র ইউনিট ৮ আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান এর অন্তর্ভুক্ত।
প্রসঙ্গ কাঠামো
প্রসঙ্গ কাঠামো, জড় প্রসঙ্গ কাঠামো ও অজড় প্রসঙ্গ কাঠামো (Frame of Reference, Inertial Frame of Reference and Non-Inertial Frame of Reference):
আমরা যখন কোনো বস্তুর অবস্থান বা বেগ পরিমাপ করি তখন কোনো বিন্দুকে প্র-সঙ্গ কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করি। ঐ প্রসঙ্গ কাঠামো সাপেক্ষে বস্তুটির রৈখিক দূরত্বকে তার অবস্থান বলি এবং প্র-সঙ্গ কাঠামো সাপেক্ষে বস্তুটির রৈখিক প্রীতিকে বেগ বলি। পরম গতি বা পরম স্থিতি বলতে কিছু নেই। সকল স্থিতি বা গতিই আপেক্ষিক। এই মহাবিশ্বে কোনো কিছুই স্থির নয়। সুতরাং পরম স্থির বলে কোনো অবস্থান পাওয়া সম্ভব নয় যাকে স্থির প্র-সঙ্গ কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করা যায়। তাই আমরা প্র-সঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে যা পরিমাপ করি তা পরম নয়। অর্থাৎ আমরা সব সময় অবস্থান বা বেগকে আপেক্ষিক ভাবে পরিমাপ করি।
কোনো বস্তুর গতি বর্ণনার জন্য ত্রিমাত্রিক স্থানে যে নির্দিষ্ট স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা বিবেচনা করা হয় অর্থাৎ যে সুদৃঢ় ত্রিমাত্রিক কাঠামোর সাপেক্ষে বস্তুর গতি বর্ণনা করা যায় তাকে প্র-সঙ্গ কাঠামো বলে।

D’vniY ¯^ifc ejv hvq, আমরা সূর্যকে প্র-সঙ্গ কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করে সূর্যে চারিদিকে ঘূর্ণয়মান গ্রহগুলোর বেগ এবং বিভিন্ন সময় তাদের অবস্থান নির্ণয় করে থাকি। পৃথিবীর পৃষ্ঠকে প্রস-ঙ্গ কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করে বিভিন্ন বহুতল ভবনের উচ্চতা নির্ণয় করি, পৃথিবীর কেন্দ্রকে প্র-সঙ্গ কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করে বিভিন্ন কৃত্রিম উপগ্রহের বেগ এবং অবস্থান নির্ণয় করি, রেলওয়ে স্টেশনকে প্রসঙ্গ কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করে যেকোনো ট্রেনের অবস্থান নির্ণয় করি ইত্যাদি ।
cÖm2 KvVv†gv‡K `yBfv‡MfvM Kiv hvq| (K) RocÖm2 KvVv‡gv Ges (L) অজড় প্রসঙ্গ কাঠামো
(ক) জড় প্রসঙ্গ কাঠামো:
যে প্রসঙ্গ কাঠামোতে জড়তার সূত্র বা নিউটনের সূত্র প্রযোজ্য তাকে জড় প্রসঙ্গ কাঠামো বলে। অন্য ভাবে বলা যায় যে, যদি কোনো পর্যবেক্ষক (পারিপাশ্বিক কাঠামোর সাথে তুলনা না করে) কোনো ভৌত পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করতে না পারে যে সে গতিশীল কিনা তবে সে যে কাঠামোতে অবস্থিত তা জড় প্রসঙ্গ কাঠামো ।
উদাহরণ স্বরূপ ধরা যাক, একটি ট্রেন সমবেগে গতিশীল। ট্রেনটি এমনভাবে চলছে যেন কোনোরূপ শব্দ বা ঝাকুনি না হয়। এই অবস্থায় ট্রেনটির কোনো বিন্দুকে প্রসঙ্গ কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করে এই ট্রেনে অবস্থিত কোনো পর্যবেক্ষকের অবস্থান এবং গতিশীল পর্যবেক্ষকের গতি পরিমাপ করা যায়। সে যদি ট্রেনে স্থির অবস্থায় দাঁড়িয়ে বা বসে থাকে তবে তার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে সে গতিশীল কি না। এখানে আরো লক্ষণীয় যে, যদি পর্যবেক্ষক ট্রেনের সাপেক্ষে গতিশীল থাকে এবং ট্রেনের বাইরের দিকে না তাকায় তবে তার পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে সে ট্রেনের গতির দিকে না ট্রেনের গতির বিপরীত দিকে চলছে ।
এখানে আরো একটি পরীক্ষা সম্পন্ন করা যেতে পারে যা জড় প্রসঙ্গ কাঠামো সম্বন্ধে আরো পরিস্কার ধারণা জন্মাবে। তাহলো ট্রেনটি সমবেগে চলা অবস্থা ট্রেনে অবস্থিত পর্যবেক্ষক যদি একটি বলকে খাড়া উপর দিকে ছুঁড়ে দেয় তবে সেই বলটি তার হাতেই ফিরে আসবে। আবার ট্রেনটি যদি থেমে থাকতো তাহলোও খাড়া উপর দিকে ছুঁড়ে দেয় বলটি তার হাতে ফিরে আসবে। কারণ যখন বলটি তার হাতে ছিল পর্যবেক্ষকসহ বলটির বেগও ট্রেনের বেগের সমান ছিল অর্থাৎ বলটিও অনুভূমিক বরাবর সমবেগে চলছিল। ব
লটিকে খাড়া উপর দিকে ছুড়ে দিলে বলটি উলম্ব বরাবর একটি বেগ প্রাপ্ত হলো কিন্তু বলটির অনুভূমিক বেগ অপরিবর্তিত ছিল। বলটি নীচে ফিরে আসতে যে সময় লেগেছে সে সময় ট্রেনটি অনুভূমিক ভাবে যে দূরত্ব গেছে, পর্যবেক্ষক এবং বলটিও সেই দূরত্ব গেছে। তাই বলটি ঠিক পর্যবেক্ষকের হাতেই এসে পড়বে। ফলে সে নিজেকে স্থির বলে মনে করবে। তাই সেই পর্যবেক্ষক কোনো অবস্থাতেই প্রমাণ করতে পারবে না যে সে গতিশীল না স্থির অবস্থায় আছে। আরো সহজ ভাবে বলা যায় যে স্থির বা সমবেগে গতিশীল উভয় ক্ষেত্রেই নিউটনের গতি সূত্রগুলো সমভাবে প্রযোজ্য হবে। এই জাতীয় কাঠামোকে জড় প্রসঙ্গ কাঠামো বলে।
(খ) অজড় প্রসঙ্গ কাঠামো:
ত্বরান্বিত বা ঘূর্ণনশীল প্রসঙ্গ কাঠামোকে অজড় প্রসঙ্গ কাঠামো বলে ৷
অজড় প্রসঙ্গ কাঠামো হলো সেই প্রসঙ্গ কাঠামো যে কাঠামোতে নিউটনের গতি সূত্রগুলো সমভাবে প্রযোজ্য হয় না। আমরা কাঠামোকে জড় প্রসঙ্গ কাঠামোর ট্রেনের উদাহরণটিকে আবার বিবেচনা করি। আমরা দেখেছি ট্রেনটি স্থির থাকলে বা সমবেগে গতিশীল থাকলে পর্যবেক্ষকের ছুঁড়ে দেয়া বলটি তার হাতে এসে পড়তো। কিন্তু যতক্ষণ বলটি বাতাসে ছিল তার মধ্যে ট্রেনটি যদি তার গতিবেগ পরিবর্তন করতো অর্থাৎ বেগ বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটাতো তাহলে তার প্রভাব বলের উপর পড়তো না।
তাই বলটি উলম্ব গতির সাথে সমবেগে অনুভূমিক বরাবর চলতো। ফলে ট্রেনে ত্বরণ সৃষ্টি হলে বলটি নীচে ফিরে আসতে যে সময় লেগেছে সে সময় ট্রেনটি অনুভূমিক ভাবে যে দূরত্ব গেছে, পর্যবেক্ষক সেই দূরত্ব যাবে। কিন্তু বলটি তার চেয়ে কম অনুভূমিক দূরত্ব অতিক্রম করবে এবং ট্রেনের মন্দন হলে বলটি ট্রেন ও পর্যবেক্ষকের চেয়ে বেশী অনুভূমিক দূরত্ব অতিক্রম করবে। তাই বলটি পর্যবেক্ষকের হাতে পড়বে না। এর থেকে পর্যবেক্ষক সহজেই অনুভব করতে পারবে যে সে গতিশীল আছে ।
আরো একটু ভাবা যাক, একজন ঘুমন্ত্ ব্যাক্তিকে লিফটে উঠিয়ে লিফ্ট চালু করা হলো। এরপর ব্যাক্তিটির ঘুম ভাঙ্গলে তার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় যে সে উপরে উঠছে না নীচে নামছে নাকি থেমে আছে। এই অবস্থায় কোনো পরীক্ষা দিয়ে তার গতীয় অবস্থা জানা সম্ভব নয়। কিন্তু লিফ্টটি যখন থামবে তখন সে ঠিক বুঝতে পারবে যে, সে গতিশীল ছিল। শুধু তাই নয়, লিফ্টটি উপরে উঠছিল না নামছিল তাও সে বুঝতে পারবে।
রাস্ত্র দিয়ে সমবেগে চলড় গাড়িতে বসে থাকলে এবং বাইরে না তাকালে গাড়ির গতীয় অবস্থা জানা সম্ভব নয়। কিন্তু যদি এই অবস্থায় গাড়িটি বাঁক নেয় তবে আরোহী একটি কেন্দ্রবিমুখী বল অনুভব করবে। ফলে একটি কেন্দ্রমুখী ত্বরণের সৃষ্টি হবে এবং তার থেকে সে তার গতীয় অবস্থা জানতে পারবে। সুতরাং ত্বরান্বিত বা ঘূর্ণনশীল প্র-সঙ্গ কাঠামো স্থির প্রস-ঙ্গ কাঠামো উভয় ক্ষেত্রে নিউটনের গতি সূত্রগুলো সমভাবে প্রযোজ্য হবে না। এই জাতীয় কাঠামো জড় প্র-সঙ্গ কাঠামো নয় । এই জাতীয় কাঠামোকে অজড় প্র-সঙ্গ কাঠামো বলে।
সার-সংক্ষেপ :
প্রসঙ্গ কাঠামো :
কোনো বস্তুর গতি বর্ণনার জন্য ত্রিমাত্রিক স্থানে যে নির্দিষ্ট স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা বিবেচনা করা হয় অর্থাৎ যে সুদৃঢ় ত্রিমাত্রিক কাঠামোর সাপেক্ষে বস্তুর গতি বর্ণনা করা যায় তাকে প্রসঙ্গ কাঠামো বলে।
জড় প্রসঙ্গ কাঠামো:
যে প্রসঙ্গ কাঠামোতে জড়তার সূত্র বা নিউটনের সূত্র প্রযোজ্য তাকে জড় প্র-সঙ্গ কাঠামো বলে। অন্য ভাবে বলা যায় যে, যদি কোন পর্যবেক্ষক (পারিপার্শ্বিক কাঠামোর সাথে তুলনা না করে) কোন ভৌত পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করতে না পারে যে সে গতিশীল কিনা তবে সে যে কাঠামোতে অবস্থিত তা জড় প্র-সঙ্গ কাঠামো। অজড় প্র-সঙ্গ কাঠামোঃ ত্বরান্বিত বা ঘূর্ণনশীল প্র-সঙ্গ কাঠামোকে অজড় প্রসঙ্গ কাঠামো বলে ।
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
১। নীচের কোনটি জড় প্র-সঙ্গ কাঠামো উদাহরণ নয়?
ক. সমবেগে একটি লিফটে আরোহন বা অবরোহনের ক্ষেত্রে লিফ্টকে প্র-সঙ্গ কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করলে ।
খ. সমবেগে গতিশীল একটি বাসকে প্র-সঙ্গ কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করলে ।
গ. একটি স্পন্দিত সরল দোলকের ববকে প্র-সঙ্গ কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করলে ।
ঘ. সমবেগে চলড় সাইকেলের বসার সীটের কোনো বিন্দুকে প্র-সঙ্গ কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করলে।
২। নীচের কোনটি জড় প্র-সঙ্গ কাঠামোর উদাহরণ?
ক. সমত্বরণে একটি লিফটে আরোহন বা অবরোহনের ক্ষেত্রে লিফ্টকে প্র-সঙ্গ কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করলে ।
খ. সমবেগে গতিশীল একটি বাসকে প্র-সঙ্গ কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করলে ।
গ. একটি স্পন্দিত সরল দোলকের ববকে প্র-সঙ্গ কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করলে ।
ঘ. সমবেগে চলড় সাইকেলের রীমের কোনো বিন্দুকে প্র-সঙ্গ কাঠামো হিসাবে বিবেচনা করলে ।
আরও দেখুনঃ