আজকে আমরা ব্যান্ড তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করবো। যা বাউবি এইচএসসি ২৮৭১ পদার্থ বিজ্ঞান ২য় পত্র ইউনিট ১০ ইলেকট্রনিক্স এর অন্তর্ভুক্ত।
ব্যান্ড তত্ত্ব
ব্যান্ড তত্ত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে হলে পদার্থের গাঠনিক উপাদান পরমাণুর মধ্যে অবস্থিত ঋণাত্মক চার্জগ্রড় কণিকা ইলেকট্রনের অবস্থান ও শক্তি সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। ইলেকট্রনের এই শক্তিকে শক্তির হিসেবে বিবেচনা করা হয় ।
শক্তি ড়র (Energy Levels) :
বোরের পরমাণু তত্ত্ব অনুসারে আমরা জানি যে, ইলেকট্রনসমূহ নিউক্লিয়াসকে কেন্দু করে কতকগুলো অনুমোদিত কক্ষপথে আবর্তন করে। এই কক্ষপথগুলোর ব্যাসার্ধ সুনির্দিষ্ট। এই কক্ষপথগুলোর সাথে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি জড়িত থাকে।
পরমাণুর ইলেকট্রন যে কক্ষপথে আবর্তন করে সেই কক্ষপথের শক্তি ধারণ করে। ইলেকট্রনের কক্ষপথগুলোর শক্তিকে কতকগুলো সুনির্দিষ্ট শক্তি স্ত্র হিসেবে প্রকাশ করা হয়। এই গুলোকে ইলেকট্রনের শক্তি বলে। ইলেকট্রনের প্রথম কক্ষপথের শক্তিকে প্রথম শক্তি ড়র এবং দ্বিতীয় কক্ষপথের শক্তিকে দ্বিতীয় শক্তি ড়র ইত্যাদি হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

ইলেকট্রনের কক্ষপথ যত বড় হয়, ইলেকট্রনের শক্তিও তত বেশি হয়। ফলে শক্তি ও তত উচ্চ হয়। পরমাণুতে ইলেকট্রনের বিভিন্ন কক্ষ পথের সাথে সংশিষ্টষ্ট শক্তিকে একটি রৈখিক চিত্রের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এই চিত্রকে শক্তি ড়র রৈখিক চিত্র বলে [ চিত্র(খ)]।
কোনো পরমাণুর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় কক্ষপথের ব্যাসার্ধ যথাক্রমে r1, r2 ও r3 হয় এবং শক্তি যথাক্রমে E1, E2 ও E3 হয় তাহলে E3 >E2>E হবে [চিত্র (ক)]।
প্রথম কক্ষপথের একটি ইলেকট্রনকে দ্বিতীয় কক্ষপথে আনতে হলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি এতে সরবরাহ করতে হয়। পরমাণুর এই অবস্থাকে উত্তেজিত অবস্থা বলে। পুনরায় ইলেকট্রনটি দ্বিতীয় কক্ষপথ থেকে প্রথম কক্ষপথে ফিরে আসলে গৃহীত শক্তি তাড়িতচৌম্বক বিকিরণ হিসেবে নিঃসরণ করবে।
শক্তি ব্যান্ড Energy Band
একটি বিচ্ছিন্ন পরমাণুর ক্ষেত্রে, কোনো নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তনরত ইলেকট্রনগুলোর একটি নির্দিষ্ট শক্তি থাকে ।
অর্থাৎ শক্তির একটি নির্দিষ্ট মান থাকে। কিন্তু পরমাণুটি যদি একটি কঠিন পদার্থের অন্তর্ভুক্ত হয়, তখন পরমাণুর ইলেকট্রনগুলোর শক্তির সেই সুনির্দিষ্ট মান থাকে না। বরং কোনো নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তনরত ইলেকট্রনগুলোর একটি সুনির্দিষ্ট শক্তির পরিবর্তে শক্তির একটি সীমা বা পালণ্ঢা থাকে। শক্তির এই পালণ্ডাকে শক্তি ব্যান্ড বলে।
ব্যাখ্যা ঃ
প্রতিটি মুক্ত বা বিচ্ছিন্ন (Isolated) পরমাণুর সুনির্দিষ্ট শক্তি ড় আছে, যেখানে ইলেকট্রন থাকতে পারে। এই ড়গুলোর মধ্যবর্তী শক্তি অঞ্চলে কোনো ইলেকট্রন থাকতে পারে না। কিন্তু এই মুক্ত পরমাণুগুলো যখন একত্রিত হয়ে কেলাস বা ক্রিস্টাল গঠন করে তখন ঐ পরমাণুর ইলেকট্রন ও নিউক্লিয়াস পার্শ্ববর্তী পরমাণুর ইলেকট্রন ও নিউক্লিয়াসের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়ার জন্য ঐ ইলেকট্রনের কক্ষপথ প্রভাবিত হয়। অন্যভাবে বলা যায় যে, প্রতিটি ইলেকট্রনের কক্ষপথ কেলাসের মধ্যে অন্যান্য আধান দ্বারা আংশিকভাবে হলেও নিয়ন্ত্রিত হয়।
একটি কেলাসের মধ্যে প্রতিটি ইলেকট্রনের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান রয়েছে। ফলে, একই কক্ষপথে ঘূর্ণনরত ভিন্ন ভিন্ন ইলেকট্রনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শক্তি র সৃষ্টি হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রথম কক্ষপথে পরিভ্রমণরত ইলেকট্রনগুলোর শক্তি র খুব সামান্য শক্তি ব্যবধানের জন্য হলেও ভিন্ন ভিন্ন। কেননা এই কক্ষপথের যেকোনো দুটি ইলেকট্রনের চারপাশের আধান পরিবেশ এক রকম থাকে না। একটি কেলাসে যেহেতু লক্ষ লক্ষ প্রথম স্ত্র ইলেকট্রন রয়েছে, সেহেতু প্রতিটি ইলেকট্রনের শক্তির খুব সামান্য পার্থক্যবিশিষ্ট শক্তি গুলো মিলে প্রথম শক্তি ব্যান্ড তৈরি করে। একইভাবে অন্যান্য ড়রের ইলেকট্রনসমূহ ভিন্ন ভিন্ন ব্যান্ড তৈরি করে। সুতরাং একটি মুক্ত বা বিচ্ছিন্ন পরমাণুর সুনির্দিষ্ট শক্তি র থাকে যাদের সরলরেখা দ্বারা নির্দেশ করা হয়। কিন্তু বিপুল সংখ্যক পরমাণু দ্বারা গঠিত কেলাসে শক্তি ব্যান্ড তৈরি হয়।
সংজ্ঞা ঃ
কোনো কঠিন পদার্থের কেলাসে বিভিন্ন পরমাণুতে একই কক্ষপথে আবর্তনরত ইলেকট্রনগুলোর শক্তি যে সীমা বা পালণ্ঢার মধ্যে অবস্থান করে তাকে শক্তি ব্যান্ড বলে ।
পরমাণুর প্রথম কক্ষপথের ইলেকট্রন দ্বারা সৃষ্ট শক্তি হলো প্রথম শক্তি ব্যান্ড। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় কক্ষপথের ইলেকট্রন দ্বারা সৃষ্ট শক্তি ব্যান্ডকে যথাক্রমে দ্বিতীয় শক্তি ব্যান্ড ও তৃতীয় শক্তি ব্যান্ড বলে । [চিত্র]
গুর“ত্বপূর্ণ ব্যান্ডসমূহ
যদিও কঠিন বস্তুতে অনেকগুলো শক্তি ব্যান্ড থাকে, তার মধ্যে তিনটি ব্যান্ড হচ্ছে প্রধান। এগুলো হলো
(ক) যোজন ব্যান্ড
(খ) পরিবহন ব্যান্ড
(গ) নিষিদ্ধ শক্তি ব্যান্ড
(ক) যোজন ব্যান্ড (Valence Band) :
পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষপথে অবস্থিত ইলেকট্রনকে যোজন ইলেকট্রন বলে । কঠিন বস্তুতে পরমাণুর যোজন ইলেকট্রনগুলোর শক্তির পালণ্ঢা বা ব্যান্ডকে যোজন ব্যান্ড বলে [চিত্র]।
একটি সাধারণ পরমাণুর দূরতম কক্ষপথের যোজন ব্যান্ডের ইলেকট্রনের শক্তি সবচেয়ে বেশি, কিন্তু এদের বন্ধনশক্তি সবচেয়ে কম। যোজন ব্যান্ড কখনও ইলেকট্রন শূন্য থাকে না। এই ব্যান্ড পূর্ণ বা আংশিক পূর্ণ থাকতে পারে। নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ক্ষেত্রে যোজন ব্যান্ড পূর্ণ থাকে। ফলে এ গ্যাসগুলো নতুন কোনো ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে না। অন্যান্য পদার্থের ক্ষেত্রে এই ব্যান্ড আংশিক পূর্ণ থাকে। আংশিক পূর্ণ যোজন ব্যান্ড আরো কিছু সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে। যোজন ব্যান্ডের ইলেকট্রন তড়িৎ পরিবহনে অংশগ্রহণ করে না, কিন্তু যোজন ব্যান্ডের হোল তড়িৎ পরিবহনে অংশগ্রহণ করে।
(খ) পরিবহন ব্যান্ড (Conduction Band) :
কোনো কোনো পদার্থে বিশেষ করে ধাতব পদার্থের যোজন ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসের সাথে খুব শিথিলভাবে যুক্ত থাকে। এমনকি কক্ষ তাপমাত্রায় কিছু কিছু যোজন ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ থেকে মুক্ত হয়ে মুক্ত ইলেকট্রনে পরিণত হয়। প্রকৃতপক্ষে এই সকল মুক্ত ইলেকট্রন পরিবাহীতে তড়িৎ পরিবহনে ভূমিকা রাখে।
পরমাণুতে অবস্থিত মুক্ত যোজন ইলেকট্রন তড়িৎ পরিবহনে অংশ গ্রহণ করে বলে এদেরকে পরিবহন ইলেকট্রন বলে । পরিবহন ইলেকট্রনগুলোর শক্তির পাল্লা বা ব্যান্ডকে পরিবহন ব্যান্ড বলে [চিত্র]।
পরিবহন ব্যান্ডের সকল ইলেকট্রন মুক্ত ইলেকট্রন। পরিবহন ব্যান্ড সম্পূর্ণ ইলেকট্রন শূন্য অথবা আংশিক পূর্ণ থাকতে পারে। যদি কোনো পদার্থের পরিবহন ব্যান্ড সম্পূর্ণ ফাঁকা থাকে, তাহলে ঐ পদার্থে তড়িৎ পরিবহন সম্ভব নয়। ঐ জাতীয় পদার্থকে অক বলে। সাধারণত, অক পদার্থের পরিবহন ব্যান্ড সম্পূর্ণ ফাঁকা থাকে এবং পরিবাহীর পরিবহন ব্যান্ড আংশিক পূর্ণ থাকে। পরিবহন ব্যান্ডের অবস্থান যোজন ব্যান্ডের উপরে থাকার কারণে পরিবহন ব্যান্ডের ইলেকট্রনের শক্তি যোজন ব্যান্ডের ইলেকট্রনের শক্তির চেয়ে বেশি থাকে ।
(গ) নিষিদ্ধ শক্তি ব্যান্ড (Forbidden Enegry gap) :
সাধারণত যোজন ব্যান্ড ও পরিবহন ব্যান্ডের মধ্যে ইলেকট্রনের কোনো শক্তি ড়র বিদ্যমান থাকে না । এজন্য এ স্থানকে নিষিদ্ধ ব্যান্ড (Forbidden band) বলে ।
শক্তি ড় রৈখিক চিত্রে পরিবহণ ব্যান্ড এবং যোজন ব্যান্ডের মধ্যবর্তী শক্তির পালণ্ঢাকে নিষিদ্ধ [চিত্র ১০.২] শক্তি ব্যান্ড বলে। শক্তি ব্যান্ড চিত্রে যোজন ব্যান্ডের সর্বোচ্চ শক্তি ড়র এবং পরিবহন ব্যান্ডের সর্বনিম্ন শক্তি স্তুরের মধ্যবর্তী ব্যবধানই নিষিদ্ধ শক্তি ব্যবধান। একে Eg দ্বারা প্রকাশ করা হয় ।
নিষিদ্ধ শক্তি ফাঁক বা অঞ্চলে কোনো অনুমোদিত শক্তি-র না থাকায় এই অঞ্চলে কোনো ইলেকট্রন থাকতে পারে না। নিষিদ্ধ শক্তি ব্যবধান এর প্রস্থ যোজন ইলেকট্রনগুলোর পরমাণুর সাথে বন্ধনের মাপকাঠি। কোনো পদার্থের নিষিদ্ধ শক্তি ব্যবধান যত বেশি হবে, যোজন ইলেকট্রনগুলোও নিউক্লিয়াসের সাথে তত দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকবে। কোনো ইলেকট্রনকে যোজন ব্যান্ড থেকে পরিবহন ব্যান্ডে নিতে হলে অর্থাৎ একে মুক্ত করতে হলে নিষিদ্ধ শক্তি ব্যবধানের সমপরিমাণ শক্তি বাইরে থেকে সরবরাহ করতে হবে। বিভিন্ন পদার্থের নিষিদ্ধ শক্তি ব্যবধান বিভিন্ন।
ব্যান্ড তত্ত্বের আলোকে পরিবাহী, অর্ধপরিবাহী ও অন্তড়ক
আমরা জানি, কিছু কিছু কঠিন পদার্থের মধ্য দিয়ে সহজে বিদ্যুৎ চলাচল করতে পারে। এগুলো সুপরিবাহক পদার্থ। আবার এমন কিছু পদার্থ আছে যেগুলোর মধ্য দিয়ে আদৌ তড়িৎ প্রবাহিত হয় না। এদেরকে অক পদার্থ বলে। এদের মাঝামাঝি শ্রেণির কিছু পদার্থ আছে যেগুলোকে অর্ধপরিবাহী বলে। তড়িৎ পরিবাহিতা ধর্মের উপর ভিত্তি করে কঠিন পদার্থের প্রকৃতিগত এই পার্থক্য শক্তি ব্যান্ডের সাহায্যে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।
পরিবাহী :
যে সব পদার্থের মধ্যে যথেষ্ট মুক্ত ইলেকট্রন থাকে এবং যেগুলোর মধ্য দিয়ে খুব সহজে তড়িৎ প্রবাহ চলাচল করতে পারে সে সব পদার্থকে পরিবাহী বলে। যেমন : তামা, অ্যালুমিনিয়াম, রূপা, লোহা ইত্যাদি পরিবাহী।
পরিবাহীতে যোজন ব্যান্ড ও পরিবহন ব্যান্ডের মাঝে কোন শক্তি ব্যবধান থাকে না। অর্থাৎ Eg এর মান শূন্য হয়। এক্ষেত্রে পরিবাহীর যোজন ব্যান্ড ও পরিবহন ব্যান্ড এর মধ্যে আংশিক উপরিলেপন ঘটে [চিত্র] কাজেই যোজন ইলেকট্রন খুব সহজেই পরিবহন ইলেকট্রনে পরিণত হতে পারে। এই উপরিলেপনের জন্য, পরিবাহীর দুই প্রাড়ে খুব সামান্য বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করলেই মুক্ত ইলেকট্রনগুলো তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি করে। পরিবাহীতে প্রচুর পরিমাণে মুক্ত ইলেকট্রন থাকার ফলে এদের রোধ খুব কম হয় অর্থাৎ তড়িৎ পরিবাহিতা বেশি হয়।
অন্তড়ক বা অপরিবাহী :
যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চলতে পারে না তাদেরকে অপরিবাহী বা অন্তড়ক বলে।
শক্তি ব্যান্ডের আলোকে, অক পদার্থের যোজন ব্যান্ড ইলেকট্রন দ্বারা সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ থাকে এবং পরিবহন ব্যান্ড সম্পূর্ণ ফাঁকা থাকে। এ ছাড়া যোজন ব্যান্ড ও পরিবহন ব্যান্ডের মধ্যে শক্তি ব্যবধান অনেক বেশি হয়। অনকের শক্তি ব্যবধান 6 ev হতে 15 eV এর মতো হয় [চিত্র]। উদাহরণস্বরূপ হীরকের নিষিদ্ধ শক্তি ব্যবধান হলো 6eV । যেহেতু অক পদার্থের যোজন ব্যান্ড সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ থাকে, ফলে এসব পদার্থে কোনো মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না।
শক্তি ব্যবধান অনেক বড় হওয়ায় শক্তিশালী তড়িৎক্ষেত্র প্রয়োগ করা সত্ত্বেও যোজন ব্যান্ড থেকে ইলেকট্রন পরিবহন ব্যান্ডে যেতে পারে না। অর্থাৎ পরিবহন ব্যান্ড প্রায় ফাঁকাই থাকে। ফলে এসব পদার্থের মধ্য দিয়ে কোনো ইলেকট্রন প্রবাহ তথা তড়িৎ প্রবাহিত হয় না এবং এগুলো অড়কের ন্যায় কাজ করে।
অর্ধপরিবাহী :
অর্ধপরিবাহী হলো সেই সব পদার্থ, যাদের তড়িৎ পরিবাহিতা পরিবাহী এবং অনক পদার্থের মাঝামাঝি । অর্ধপরিবাহী পদার্থের শক্তি ব্যান্ড কাঠামো অনক পদার্থের অনুরূপ। কিন্তু অর্ধপরিবাহী পদার্থের নিষিদ্ধ শক্তি ব্যবধানের মান অক পদার্থের তুলনায় অনেক কম।
পরম শূন্য তাপমাত্রায় যে সকল পদার্থের যোজন ব্যান্ড সম্পূর্ণরূপে ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ থাকে এবং পরিবহন ব্যান্ড সম্পূর্ণরূপে ফাঁকা থাকে এবং নিষিদ্ধ শক্তি ব্যবধান অত্যন্ত্ কম (Eg = 1 eV ) হয় সেসব পদার্থকে অর্ধপরিবাহী বলে। জার্মেনিয়াম, সিলিকন, গেলিয়াম ইত্যাদি অর্ধপরিবাহী পদার্থ। কক্ষ তাপমাত্রায় অর্ধপরিবাহীর যোজনব্য প্রায় পূর্ণ এবং পরিবহন ব্যান্ড প্রায় খালি থাকে ।
উদাহরণস্বরূপ- জার্মেনিয়াম এবং সিলিকনের ক্ষেত্রে শক্তি ব্যবধানের মান যথাক্রমে 0.72eV থেকে 1.1eV। 0 K বা পরম শূন্য তাপমাত্রায় ইলেকট্রন এই ক্ষুদ্র শক্তি ব্যবধান অতিক্রম করে পরিবহন ব্যান্ডে যেতে পারে না ফলে পরিবহন ব্যান্ড সম্পূর্ণরূপে ফাঁকা থাকে। ফলে পরম শূন্য তাপমাত্রায় অর্ধপরিবাহী অনকের ন্যায় আচরণ করে। কিন্তু কক্ষ তাপমাত্রায় যোজন ব্যান্ডের কিছু ইলেকট্রন তাপীয় শক্তি অর্জন করে পরিবহন ব্যান্ডে চলে যায়।
ফলশ্র“তিতে এগুলো তড়িৎক্ষেত্র তথা বিভব পার্থক্য প্রয়োগের ফলে মুক্ত ইলেকট্রন হিসেবে তড়িৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়।
সুতরাং তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবহন ব্যান্ডে ইলেকট্রনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে অর্ধপরিবাহীর তড়িৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ অর্ধপরিবাহীর রোধের উষ্ণতা গুনাংকের মান ঋণাত্মক ।
সার-সংক্ষেপ :
শক্তি ড়র :
পরমাণুর ইলেকট্রন যে কক্ষপথে আবর্তন করে সেই কক্ষপথের শক্তি ধারণ করে। ইলেকট্রনের কক্ষপথগুলোর | শক্তিকে কতকগুলো সুনির্দিষ্ট শক্তি ড়র হিসেবে প্রকাশ করা হয়। এই গুলোকে ইলেকট্রনের শক্তি ড়র বলে।
শক্তি ব্যান্ড :
কোনো কঠিন পদার্থের কেলাসে বিভিন্ন পরমাণুতে একই কক্ষপথে আবর্তনরত ইলেকট্রনগুলোর শক্তি যে | সীমা বা পালণ্ঢার মধ্যে অবস্থান করে তাকে শক্তি ব্যান্ড বলে ।
যোজন ব্যান্ড :
পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষপথে অবস্থিত ইলেকট্রনকে যোজন ইলেকট্রন বলে। কঠিন বস্তুতে পরমাণুর যোজন ইলেকট্রনগুলোর শক্তির পালণ্ঢা বা ব্যান্ডকে যোজন ব্যান্ড বলে ।
পরিবহন ব্যান্ড:
পরমাণুতে অবস্থিত মুক্ত যোজন ইলেকট্রন তড়িৎ পরিবহনে অংশ গ্রহণ করে বলে এদেরকে পরিবহন ইলেকট্রন বলে। পরিবহন ইলেকট্রনগুলোর শক্তির পাল্লা বা ব্যান্ডকে পরিবহন ব্যান্ড বলে।
নিষিদ্ধ শক্তি ব্যান্ড :
সাধারণত যোজন ব্যান্ড ও পরিবহন ব্যান্ডের মধ্যে ইলেকট্রনের কোনো শক্তি ড়র বিদ্যমান থাকে না। এজন্য এ স্থানকে নিষিদ্ধ ব্যান্ড (Forbidden band) বলে ।
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন :
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। অর্ধপরিবাহীর যোজন ব্যান্ড ও পরিবাহন ব্যান্ডের মধ্যে শক্তির পার্থক্য প্রায় –
(ক) 1 ev
(খ) 15 ev
(গ) 25 ev
(ঘ) 50 ev
২। নিচের কোনটি সত্য?
(ক) পরিবাহীর পারিবহন ব্যান্ড সম্পূর্ণ ফাঁকা থাকে
(খ) অপরিবাহীর পরিবহন ব্যান্ড পূর্ণ থাকে
(গ) অর্ধপরিবাহীর পরিবহন ব্যান্ড আংশিক পূর্ণ থাকে
(ঘ) অর্ধ পরিবাহীর যোজন ব্যান্ড ও পরিবহন ব্যান্ডের মধ্যে উপরিপাতন ঘটে
আরও দেখুনঃ