পদার্থবিজ্ঞানে ভেক্টর রাশি ও এর প্রকারভেদ : ভৌত জগতে থাকা যা কিছুকে পরিমাপ করা যায়, যা কিছুর পরিমাণকে সংখ্যার সাহায্যে প্রকাশ করা সম্ভব, এ সকল কিছুকেই রাশি বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
পদার্থবিজ্ঞানে ভেক্টর রাশি ও এর প্রকারভেদ
যে সকল রাশিকে শুধু মান দ্বারা সম্পুর্ণরূপে প্রকাশ করা সম্ভব নয়, রাশিগুলোর পরিপূর্ণ প্রকাশের জন্য তার মান এবং দিক উভয়ের প্রয়োজন হয় এবং শুধু মান কিংবা শুধু দিক কিংবা উভয়ের পরিবর্তণে রাশিটির পরিবর্তণ ঘটে, তাদের ভেক্টর কিংবা সদিক রাশি বলা হয়। সরণ, বেগ, ত্বরণ, ওজন, বল, তীব্রতা ইত্যাদি কিছু ভেক্টর আ সদিক রাশির উদাহরণ। ভেক্টরের পরিমাণ এক মাত্রিক, দ্বি মাত্রিক বা ত্রি মাত্রিক হতে পারে।
অবস্থান ও মানের বিভিন্নতার ওপর ভিত্তি করে, এবং তাদের মধ্যকার বৈপরীত্য কিংবা সাদৃশ্যতার উপর বিভিন্ন ধরণের ভেক্টরের শ্রেণিবিভাগ করা যেতে পারে।
শূণ্য ভেক্টর:
যখন একটি ভেক্টর তার বিপরীত ভেক্টরের সাথে যোগ করা হয়, তখন এটি চূড়ান্ত ফলাফল হিসাবে শূন্য ভেক্টর দেয়। শূন্য ভেক্টরকে নাল ভেক্টরও বলা হয়। শূন্য ভেক্টরের মান “0” । একটি শূন্য ভেক্টরের কোন নির্দিষ্ট দিক থাকে না।
একক ভেক্টর:
যখন একটি ভেক্টরকে তার নিজস্ব মান দ্বারা ভাগ করা হয়, তখন একক ভেক্টর পা্ওয়া যায়। একক ভেক্টরের মান এক। স্থানাঙ্ক ব্যাবস্থায় X, Y, Z অক্ষ বরাবর একক ভেক্টর রয়েছে। এরা যথাক্রমে, i, j, k।
ধরা যাক, A একটি ভেক্টর। A এর মান হল |A|।এর দিকে অবস্থিত একক ভেক্টর a=A/|A|
অবস্থান ভেক্টর:
অবস্থান ভেক্টর ব্যাসার্ধ ভেক্টর নামেও পরিচিত। অবস্থান ভেক্টর উৎপত্তির ক্ষেত্রে একটি পয়েন্ট সঠিক অবস্থান নির্দেশ করে। ব্যাসার্ধ ভেক্টর বা অবস্থান ভেক্টরের প্রাথমিক বিন্দু মূল বিন্দুতে স্থিতিশীল। ধরা যাক মূল বিন্দুটি O বিন্দুতে। ত্রিমাত্রিক কার্টেসিয়ান সিস্টেমে একটি বিন্দু রয়েছে, P। OP হবে P-এর ব্যাসার্ধ বা অবস্থান ভেক্টর।
সমবিন্দু ভেক্টর:
যদি একাধিক ভেক্টর একই প্রারম্ভিক বিন্দু বা সূচনা বিন্দু পায় তবে তারা একে অপরের কো-ইনিশিয়াল বা সমবিন্দু ভেক্টর। সমস্ত অবস্থান ভেক্টরগুলি মূল বিন্দু থেকে শুরু হয়। সুতরাং, তারা একে অপরের কো ইনিশিয়াল।
ধরা যাক দুটি ভেক্টর OA, OB ; O বিন্দু থেকে সূচিত হয়েছে, অর্থাৎ উভয়ের আদি বিন্দু বা পাদ বিন্দু O বিন্দুতে অবস্থিত। কাজেই এরা সমবিন্দু ভেক্টর।
সদৃশ এবং অসদৃশ ভেক্টর:
একই ধরনের ভেক্টর পরস্পরের সমান্তরাল হলে তাদের সদৃশ ভেক্টর বলা হয়। এটির জন্যে ভেক্টরগুলির মা্ন একই হওয়ার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু তারা একে অপরের সমান্তরাল হওয়া বাধ্যতামূলক। যদি না হয়, তাদের বলা হয় অসদৃশ ভেক্টর। চিত্রে, A, B, C তিনটি সদৃশ ভেক্টর।
সমতলীয় ভেক্টর:
যদি একটি সমতলে তিন বা তিনটির বেশি ভেক্টর থাকে তবে তাকে কো-প্লানার ভেক্টর বলে। তারা সমতলের সাথে সমান্তরালও হলেও সমতলীয় হিসেবে বিবেচিত হবে।
কো-লাইনার ভেক্টর:
কো-লাইনার ভেক্টরকে সমান্তরাল ভেক্টরও বলা হয়।
সমান ভেক্টর।:
যদি দুটি বা দুটি ভেক্টরের দিক একই হয়, অর্থাৎ তারা একে অপরের সাথে কো-লাইনার বা সমান্তরাল হয় এবং তারা একই মান ধারণ করে , তবে তাদের সমান ভেক্টর বলা হয়।
স্থানচ্যুতি ভেক্টর:
যদি একটি বিন্দু Aকে অন্য একটি বিন্দু “B”-এ সরানো হয়, তাহলে একটি স্থানচ্যুতি ভেক্টর AB
সৃষ্টি হয়।
ঋণাত্মক ভেক্টর:
একই মানের দুটি ভেক্টর কিন্তু চিহ্নে ভিন্ন তারা পরষ্পরের ঋণাত্মক ভেক্টর। এই ভেক্টরগুলি যোগ করা হলে এরা নাল বা শূন্য ভেক্টর ফলাফল হিসাবে প্রদান করে। চিত্রে A ও -A পরষ্পরের ঋণাত্মক ভেক্টর।
আরও পড়ুন:
3 thoughts on “পদার্থবিজ্ঞানে ভেক্টর রাশি ও এর প্রকারভেদ”