[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

 মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য। যা বাউবি এইচএসসি ২৮৭১ পদার্থ বিজ্ঞান ২য় পত্র ইউনিট ১১ জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান এর অন্তর্ভুক্ত।

 

 মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য

 

 মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য

মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য

মানুষের জানার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। তথাপি মানুষ আকাশমন্ডলীর ঘটনা ও নিদর্শনাবলী পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন তত্ত্ব নিরূপনে সচেষ্ট রয়েছে। মহাবিশ্ব কেন সৃষ্টি হলো, কিভাবে সৃষ্টি হলো, কেনইবা এটি টিকে আছে এ সম্পর্কে আমাদের কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে এটি কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে এর বিবর্তনের ধারা সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। রাতের আকাশে আমরা অসংখ্য তারা বা নক্ষত্র দেখতে পাই। এমন অসংখ্য নক্ষত্র নিয়ে গঠিত হয়েছে একটি গ্যালাক্সি।

সপ্তদশ শতাব্দীতে টেলিস্কোপের ব্যবহার থেকে জানা গেল যে, সূর্য আমাদের ছায়াপথ গ্যালাক্সির (Milky way) অন্যান্য নক্ষত্রের মতোই একটি সাধারণ নক্ষত্র। তখন মনে করা হতো, সূর্য হচ্ছে আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রবিন্দু। বিংশ শতাব্দীতে এসে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জেনে যান যে, সূর্যের অবস্থান আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে অনেক অনেক দূরে। এরূপ কোটি কোটি গ্যালাক্সি নিয়ে গঠিত হয়েছে আমাদের এ মহাবিশ্ব। আমাদের ছায়াপথ গ্যালাক্সিতে নক্ষত্রের সংখ্যা প্রায় 10″।

মহাবিশ্বে এরকম প্রায় 10 ” সংখ্যক গ্যালাক্সি রয়েছে। আর প্রত্যেকটি গ্যালাক্সিতে রয়েছে আমাদের গ্যালাক্সির প্রায় সমসংখ্যক নক্ষত্র। পৃথিবী মহাবিশ্বের তুলনায় অতি অতি ক্ষুদ্র। পৃথিবী থেকে মহাকাশে নক্ষত্রদের দেখতে কাছাকাছি মনে হলেও এদের পরস্পরের মধ্যে রয়েছে অনেক আলোক বর্ষের ব্যবধান।

 

google news
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

সভ্যতার সেই শুর“ হতেই বিজ্ঞানীগণ এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য এবং পরিণতি সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা পোষণ করে আসছেন। এ সব ধারণা এবং বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার ফল হিসেবে বিজ্ঞানের একটি শাখা সৃষ্টি হয়েছে, যা কসমোলজি (Cosmology) বা ‘মহাজাগতিক বিজ্ঞান’ নামে পরিচিত। বিংশ শতাব্দীতে দুই জন বিখ্যাত বৈজ্ঞানিকের দ্বারা দুটি পরীক্ষা সংঘটিত হয়, যেগুলোর মাধ্যমে মহাবিশ্ব সম্পর্কে একটি সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক ধারণা প্রায় সকল পদার্থ বিজ্ঞানীদের মাঝে গৃহীত হয়েছে। পরীক্ষা দুটি হলো-

১। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ এবং

২। মহাজাগতিক পশ্চাৎপট বিকিরণ।

নিম্নে পরীক্ষা দুটির পর্যবেক্ষণলব্ধ ফলাফল বর্ণনা করা হলো :

(১) মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ
(Expannon of the Universe)

১৯২০ সালে বিখ্যাত মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডউইন হাবল (Edwin Hubble) তার 2.5 m টেলিস্কোপের সাহায্যে গ্যালাক্সিগুলো পর্যবেক্ষণের সময় লক্ষ্য করলেন যে, গ্যালাক্সিগুলো পরস্পর থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। দূরবর্তী গ্যালাক্সি এর নক্ষত্র থেকে আসা আলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, নক্ষত্রের বর্ণালীর ফ্রনহকার কালো রেখাগুলো ধীরে ধীরে লাল বর্ণের দিকে সরে যাচ্ছে। ডপলার ক্রিয়ার মাধ্যমে এ থেকে সিদ্ধাড় আসা যায় যে, দূরবর্তী গ্যালাক্সি বা গ্যালাক্সিগুচ্ছ আমাদের থেকে দূরে সরে
যাচ্ছে।

১৯২৯ সালে হাবল তাঁর দীর্ঘ নয় বছরের পর্যবেক্ষণের ফলাফল পর্যালোচনা করে সিদ্ধাড়ে উপনীত হন যে, মহাবিশ্ব অত্যড় দ্রতগতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে। তাঁর এই সিদ্ধাড়কে তিনি একটি সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করেন যা হাবলের সূত্র নামে পরিচিত।

 

 মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য

 

হাবলের সূত্রনুসারে-

গ্যালাক্সিসমূহ নিজেরা এবং পৃথিবী হতে দ্র“তগতিতে দূরে সরে যাচ্ছে এবং গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে দূরত্ব যতো বেশি পরষ্পর হতে দূরে সরে যাওয়ার বেগও ততো বেশি ।

পৃথিবী হতে কোনো গ্যলাক্সির দূরত্ব d এবং দূরগমনের বেগ v হলে হাবলের সূত্রানুসারে,

v d

= Hd

এখানে, H একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক, যা হাবল ধ্রুবক বা হাবল প্যারামিটার নামে পরিচিত। এর একক হচ্ছে s-1।

তবে প্রচলিত একক হচ্ছে কিলোমিটার পার সেকেন্ড পার মেগাপারসেক বা 1.(kms-1/Mpc)

সাম্প্রতিক বিভিন্ন পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে হাবল প্যারামিটার এর সর্বোত্তম মান পাওয়া যায়

H=72(kms-1/ Mpc)   [1 Mpc = 3.084×10¹9 km]

হাবল প্যারামিটার এর গ্রহণযোগ্য মান ব্যবহার করে আমরা মহাবিশ্বের বয়স 14×109y বা ১৪০০ কোটি বছর নির্ণয় করতে পারি ।

আবার pc বা পারসেক (parsec) হচ্ছে মহাবৈশ্বিক দূরত্ব পরিমাপের একক। সূর্য বা পৃথিবীর মধ্যকার গড় দূরত্বকে এক pc অ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল ইউনিট (AU) বলে। 1 AU = 1.495×108 km । 1 AU দৈর্ঘ্যের কোনো চাপ (arc) যে দূরত্বে ঠিক এক সেকেন্ডে কোণ উৎপন্ন করে সেই দূরত্বকে 1 pc বা এক পারসেক বলে। 1 pc = 3.261 y = 3.0857 x 1013 km বা Mpc (mega parsec) = 106pc = 3.0857×1019 km.

 

 মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য

 

 মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য

 

(২) ‘মহাজাগতিক- মাইক্রোওয়েভ পশ্চাৎপট বিকিরণ
Cosmic Microwave Background Radiation- CMB

যেহেতু গ্যালাক্সিগুলো পরষ্পর হতে দূরে সরে যাচ্ছে, সুতরাং অতীতে কোনো একসময় সেগুলো অবশ্যই একসাথে ছিল। প্রাথমিক অবস্থায় মহাবিশ্ব অকল্পনীয় ঘনত্বের বস্তু ও বিকিরণ দ্বারা গঠিত ছিল। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের ফলে, এই বস্তু ও বিকিরণ ততোই শীতল হতে থাকল। এর প্রেক্ষিতে বিকিরণের কণা বা ফোটনের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকল। মহাবিশ্বের বিকিরিত শক্তির একটি নির্দিষ্টমাত্রা বা পরিমাণ আছে এবং সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বে ঐ নির্দিষ্ট শক্তিও সম্প্রসারিত অংশে বিকিরিত হচ্ছে। এখনো, ঐ বিকিরিত অবশিষ্ট শক্তির অস্ত্রিত্ব নির্ণয় করা যায়। এই বিকিরণকে মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ পশ্চাৎপট বিকিরণ বলে।

ষাটের দশকের মাঝামাঝি ১৯৬৫ সালে এই জাতীয় বিকিরণের প্রথম সন্ধান পান আর্নো অ্যালান পেনজিয়াস (Arno Allan Penzians) এবং রবার্ট উইলসন (Robert Wilson) নামের দুইজন মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী। তাঁরা বেল ল্যাবরেটরিতে উপগ্রহ যোগাযোগের জন্য একটি মাইক্রোওয়েভ এন্টেনা নিয়ে কাজ করেছিলেন। তাঁরা দেখলেন যে, যেকোনো দিকেই এন্টেনাকে তাক করা হোক না কেন, এন্টেনাতে একটি অদ্ভূত বিকিরণ তথা তরঙ্গ চারদিক থেকে আসছে।

পেনজিয়াস ও উইলসন ব্যাপক পর্যবেক্ষণের পর সিদ্ধাড়ে উপনীত হলেন যে, মাইক্রোওয়েভ এন্টেনাতে মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থার তীব্র বিকিরণের অবশিষ্ট কিছু শক্তির অস্তিত্ব ধরা পড়ছে। এই বিকিরণ নির্দিষ্ট কোনো শনাক্তকৃত উৎস থেকে নয়, বরং সারা বছরব্যাপী সবসময় সকল দিক থেকে আসছে। তারা হিসাব করে দেখান যে, মাইক্রোওয়েভ পটভূমি বিকিরণের তাপমাত্রা প্রায় 3 K এবং সবাই মেনে নিলেন যে, এই মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ বিগ ব্যাংগ মডেল অনুযায়ী প্রত্যাশিত অবশিষ্ট বিকিরণ। তাঁদের এই যুগাকারী আবিষ্কারের জন্য ১৯৭৮ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পান ।

 

 মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য

 

বিগ ব্যাংগ তত্ত্ব
Big Bang Theory

১৯২৭ সালে বেলজিয়ামের জ্যোতির্বিদ জর্জ লেমাইটার (George Lemaitre) প্রসারণশীল বিশ্ব সংক্রান্ত্ তত্ত্ব প্রদান করেন যা হাবলের সূত্রের সাথে মিলে যায়। ১৯৩১ সালে তিনি আরো প্রস্তুাব করেন যে, প্রসারণশীল বিশ্বকে যদি সময়ের সাথে পিছিয়ে নেয়া হয়, তাহলে একটা বিন্দুতে আমরা উপনীত হতে পারবো, যেখানে মহাবিশ্বের সমস্ড ভর পুঞ্জীভূত ছিল, যাকে আদিম পরমাণু বলা যেতে পারে এবং এখান থেকেই স্থান-কালের উদ্ভব। তাই জর্জ লেমাইটারকে বিগ ব্যাংগ মডেলের জনক বলা হয়ে থাকে।

জর্জ গ্যামো মহাবিশ্বের প্রসারণ সম্পর্কে ধারণা করেছিলেন যে, যেহেতু গ্যালাক্সিসমূহ পরষ্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে তাই সুদুর অতীতে নিশ্চয়ই তারা পরষ্পরের খুব কাছাকাছি ছিল। অর্থাৎ কোনো এক সময় মহাবিশ্বের সব বস্তুপিন্ড একত্রিত অবস্থায় ছিল এবং এক মহাবিস্ফোরণের ফলেই এগুলো ক্রমেই ছড়িয়ে পড়তে শুর“ করে। এই তত্ত্বের নাম মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব বা বিগ ব্যাংগ তত্ত্ব। বিগ ব্যাংগ বা মহাবিস্ফোরণ আমাদের পরিচিতি বিস্ফোরণ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক একটি ঘটনা।

 

 মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য

 

সাধারণ বিস্ফোরণ একটি নির্দিষ্ট স্থান বা কেন্দ্র থেকে শুরু করে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বিগ ব্যাংগের বিস্ফোরণ একই সময় সকল স্থানে ঘটেছিল। প্রকৃতপক্ষে বিগ ব্যাংগ বলতে মহাবিশ্ব সৃষ্টির ‘শুর—’ বোঝায় যখন থেকে স্থান ও সময় গণনা আরম্ভ হয়। অর্থাৎ বিগ ব্যাংগের পূর্বে কিছুই ছিল না। বিগ ব্যাগ -এর পর 10s পর্যন্ত্ কী ঘটেছিল তা আমরা জানতে পারিনি, কিছুটা ধারণা পেয়েছি মাত্র।

মহাবিশ্ব শুর— হয়েছিল একটি অপরিমেয় ক্ষুদ্র, অসীম তাপ ও অসীম ঘনত্ববিশিষ্ট শক্তির উৎস থেকে। একে বলা হয় অনন্যতা বা অদ্বৈত বিন্দু জর্জ গ্যামো (Singularity)। এতে সব মৌলিক বলগুলো একত্রে একীভূত বল হিসেবে ছিল। মহাবিশ্ব সৃষ্টির 10s পরে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো কার্যকারিতা লাভ করে। এ সময়কে পঞ্চাঙ্কের সময় বলা হয়। এ সময় মহাবিশ্ব উচ্চ শক্তির ফোটনে পরিপূর্ণ ছিল। ফোটনগুলো খুব ঘন সন্নিবিষ্ট অবস্থায় ছিল এবং এদের তাপমাত্রা ছিল 10K।

10s থেকে 10-38s সময়কালকে ধরা হয় মহাএকীভবনের কাল। এ সময়ে মহাকর্ষ বল একীভূত অবস্থায় থাকা অন্য মৌলিক বলসমূহ থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং আদি মৌলিক কণা ও প্রতি কণাগুলো তৈরি হতে শুর“ করে। 10-6s থেকে 10-2s সময়কালে মহাবিশ্বের তাপমাত্রা 1032 K হতে 1027 K এ নেমে আসে। এ সময়ে একটি দশা পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে একীভূত বল থেকে সবল নিউক্লিয় বল পৃথক হয়ে যায়। এই সময়ে মহাবিশ্ব খুব দ্র“ত সূচকীয়ভাবে প্রসারিত হতে শুর“ করে। এ কালকে স্ফীতিকাল এবং এ ঘটনাকে মহাবিশ্বের স্ফীতি (Inflation) বলে।

মহাবিশ্ব এ সময়ে প্রচন্ডভাবে ফুলে ফেঁপে ওঠে এবং আদি অবস্থার প্রায় 1030 গুণ বড় হয়ে যায়। এ সময় শক্তিশালী বলের প্রভাবে কোয়ার্ক কণাগুলো কাছাকাছি আসে। মহাবিশ্ব তখন ফোটন, কোয়ার্কস ও লেপটনের গরম স্যুপে পরিণত হয়। 10s থেকে 10s পর্যন্ত্ কোয়ার্ক- লেপটন একত্রে স্যুপ অবস্থায় ছিল ।

10-6s থেকে 10-2s সময়কালকে দুর্বল বলের কাল হিসেবে ধরা হয়। এ সময়ে দুর্বল বল (Weak Force) তাড়িৎ চৌম্বক বল থেকে পৃথক হয়ে যায়। ফলে এ সময় মৌলিক বল হয় চারটি। এ সময় মহাবিশ্বের তাপমাত্রা 102 K এ নেমে আসে।

মহাবিস্ফোরণের 10-12s থেকে 10’s সময়কালকে কোয়ার্ককাল হিসেবে গণ্য করা হয়। এ সময় কোয়ার্ক এবং প্রতি- কোয়ার্ক পরস্পরের সংস্পর্শে এসে পরস্পরকে ধ্বংস করে দেয়। শুধু অল্প কিছু কোয়ার্ক (প্রায় প্রতি বিলিয়নে একটি) এদের প্রতি-কোয়ার্ক না পাবার জন্য বেঁচে যায় বা রক্ষা পায়, যেগুলো অবশেষে সংযুক্ত হয়ে পদার্থ গঠন করে।

বিগ ব্যাংগ এর পরে 10s থেকে 1s সময়কালকে হ্যাডরনের কাল হিসেবে গণ্য করা হয়। এ সময়ে মহাবিশ্বের তাপমাত্রা 10′ K -এ নেমে আসে। কোয়ার্কগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়ে হ্যাডরন তৈরি করে। হ্যাডরন পর্বের চূড়াড় অবস্থায় ইলেকট্রনগুলো প্রোটনের সাথে সংঘর্ষের ফলে একীভূত হয়ে নিউট্রন উৎপন্ন করে এবং নিউট্রিনো নামে আর একটি কণা নির্গত হয় ।

বিগ ব্যাগ এর 1s থেকে 3 মিনিট সময়কালকে লেপটনের কাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হ্যাডরন কাল শেষে বেশির ভাগ হ্যাডরন ও প্রতি হ্যাডরন বিনাশিত হয়। এর ফলে লেপটনসমূহ, যেমন- ইলেকট্রন এবং প্রতি ইলেকট্রন (পজিট্রন) মহাবিশ্বে আধিপত্য বিস্তৃর করে। ইলেকট্রন ও পজিট্রন যখন সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন এগুলো পরস্পরকে বিনাশ করে এবং ফোটনরূপে শক্তির আবির্ভাব ঘটে। ফোটনগুলো আবার পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং ইলেকট্রন ও পজিট্রন যুগল সৃষ্টি করে ।

মহাবিস্ফোরণের 3 মিনিটের মাথায় তাপমাত্রা 10K -এ নেমে আসে। তখন মহাবিশ্ব যথেষ্ট শীতল হয়েছে। এসময় নিউক্লিয় ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রোটন ও নিউট্রন একত্রিত হয়ে অল্পভরের নিউক্লিয়াসসমূহ যেমন- ডিওটেরিয়াম, হিলিয়াম এবং লিথিয়াম গঠন করে। কিন্তু ফোটন কণাগুলো সৃষ্ট নিউক্লিয়াসের সাথে মিথষ্ক্রিয়া শুর করায় খুব বেশি দূর যেতে পারে না। ফলে মহাবিশ্ব তখনও অস্বচ্ছ ছিল।

মহাবিস্ফোরণের 3×10 বছরের সময় তাপমাত্রা 400K এ নেমে আসে। মহাবিশ্ব তখন যথেষ্ট শীতল। এ সময়ে ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসের সাথে সংযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে পরমাণু গঠন করছে। যেহেতু ফোটন আধান নিরপেক্ষ কণা, এ কারণে নিরপেক্ষ পরমাণু এর সাথে খুব কম মিথষ্ক্রিয়া করে। তাই আলো তখন বহুদূর পরিভ্রমণ করতে পারে।

অর্থাৎ এ সময়ে মহাবিশ্ব খুব স্বচ্ছ (Transparent) দেখায়। এই বৈশিষ্ট্যমূলক সময়কে পুনর্গঠন কাল (Recombination time) বলা হয়। এ প্রক্রিয়ায় মুক্ত ইলেকট্রনসমূহ পরমাণুতে আবদ্ধ হবার ফলে পশ্চাৎপট বিকিরণ সর্বত্র ভ্রমণ করার সুযোগ পায় । যা আমাদের সংবেদনশীল টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে। এ সময়ে মহাবিশ্বে প্রায় 75% হাইড্রোজেন, 25% হিলিয়ামের সাথে খুব অল্প পরিমাণ লিথিয়ামের উপস্থিতি দেখা যায় ।

বিগ ব্যাংগ এর ৩০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে মহাকর্ষের প্রভাবে হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম গ্যাসের পরমাণু সমূহ মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আলাদাভাবে একত্রিত হতে শুর“ করে এবং নিজস্ব মহাকর্ষের প্রভাবে জমাট বাঁধতে থাকে এবং সংকোচিত হয়। ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং হাইড্রোজেন পরমাণুর মধ্যে নিউক্লিয় বিক্রিয়া শুর হয় এবং কালক্রমে নক্ষত্র ও গ্যালাক্সিগুলোর সৃষ্টি হয়।

 

 মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য

 

উদাহরণ-১।

উরসা মেজর গ্যালাক্সিগুচ্ছ আমাদের গ্যালাক্সি থেকে 109 আলোকবর্ষ দূরত্বে অবস্থিত। হাবল ধ্রুবক 72(kms-1/ Mpc) হলে উরসা মেজর গ্যালাক্সিগুচ্ছ আমাদের থেকে কত বেগে দূরে সরে যাচ্ছে?

সমাধান:

এখানে,

দূরত্ব, d = 109 y

হাবন ধ্র“বক, H = 72(kms-1/ Mpc)

= 72 kms-1/(3.26×106 ly)

বেগ, v =?

আমরা জানি,

v = Hd

= (.72km – 1×1091y ) /(3.26×10 1y)

= 22.08×10′ kms-1

উ: = 22.08x10kmst

সার-সংক্ষেপ :

বিগ ব্যাংগ :

বিগ ব্যাংগ বা মহাবিস্ফোরণ আমাদের পরিচিত বিস্ফোরণ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক একটি ঘটনা। সাধারণ বিস্ফোরণ একটি নির্দিষ্ট স্থান বা কেন্দ্র থেকে শুর“ করে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বিগ ব্যাংগের বিস্ফোরণ একই সময় সকল স্থানে ঘটেছিল।

বহুনির্বাচনী প্রশ্ন :

সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন

১। বিগ-ব্যাংগ সংঘটিত হয়েছিল?

(ক) মহাকাশে

(খ) পৃথিবীতে

(গ) সৌরজগতে

(ঘ) সর্বত্র

২। মহাজাগতিক দূরত্ব গণনায় সাধারণত কোন একক ব্যবহার করা হয়?

(ক) im

(খ) km

(গ) year

(ঘ) pc (parsec )

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment