রাস্তার ব্যাংকিং কোন : অনুভূমিক রাস্তায় যেন হঠাৎ উচ্চ মানের দ্রুতিতে বাঁক নেয়ার সময় গাড়ি ছিটকে গিয়ে দুর্ঘটনা না ঘটে, তার জন্য প্রতিটি বাঁকে রাস্তায় বাইরের দিক ভিতরের দিকের চেয়ে কিছুটা উঁচু করে তৈরি করা হয়। একে রাস্তার ব্যাংকিং বলা হয়।
[ রাস্তার ব্যাংকিং কোন ]
বিষয়টিকে একটু বুঝিয়ে বলা যাক।
ধরুন আপনি একটি চাবির রিং কে আপনার তর্জনি আঙ্গুলের মাথায় নিয়ে অনুভূমিক ভাবে ঘোরাতে শুরু করলেন।
ওপর থেকে লক্ষ্য করলে খেয়াল করে দেখবেন যে রিং টি একটি বৃত্তাকার পথ অনুসরণ করে থাকে।
একই ভাবে আপনি যদি একটি বলের একপ্রান্তে একটি সুতো বেঁধে অনুভূমিক ভাবে আঙুলে কিংবা হাতে ধরে ঘুরাতে শুরু করেন, একই ধরণের ঘটনা দেখতে পাবেন।
দুই ক্ষেত্রেই এটি স্পষ্টভাবে অনুভব করতে পারবেন যে চাবির রিং কিংবা বলটিকে কেন্দ্র থেকে একটি বিশেষ বলের দ্বারা টেনে ধরে রাখা হয়েছে যা আপনি নিজেই সরবরাহ করছেন। এবং কোন এক বিশেষ ধরণের বল, বল কিংবা এদের চলন পথের প্রতিটি বিন্দুর স্পর্শক বরাবর বাইরের দিকে ছুড়ে দিতে চাইছে। প্রথম ধরনের বল যা বৃত্তাকার গতিতে গতিশীল কোন বস্তুকে তার কেন্দ্রের দিকে টেনে ধরে রাখে তাকে কেন্দ্রমুখী বল বলে এবং দ্বিতীয় ধরণের বল, যা কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে কাজ করছে, তাকে কেন্দ্রবিমুখী বল বলে। কেন্দ্রমুখী বলকে অভিকেন্দ্র বল এবং কেন্দ্র বিমুখী বলকে অপকেন্দ্র বল ও বলা হয়ে থাকে। কেন্দ্রমুখী ও অপকেন্দ্র বলের মান সমান ও দিক বিপরীত হয়ে থাকায় বল কিংবা চাবির রিংটি সাম্যাবস্থায় থাকে।
এখন মনে করুন একটি অনুভূমিক রাস্তার মোড়ে একটি গাড়ি নিয়ে বাঁক দেয়ার চেষ্টা করছেন। আপনার গাড়ির চাকা এবং পিচঢালা রাস্তার মধ্যে ঘর্ষণ বল কাজ করে।
এ ঘর্ষণ বল আপনার গাড়িকে বৃত্তাকার পথে চলার জন্য কেন্দ্রমুখী বল সরবরাহ করে। এ ধরণের ঘর্ষণ বলের প্রকৃতি জানতে চাওয়ার চেষ্টা করা হলে তা হবে স্থিতি ঘর্ষণ। চাবির রিং এর চাবি গুলোর মতো বা সুতার প্রান্তে থাকা বলটির মতোই এখানেও গাড়ির চাকাগুলো বাইরের দিকে ছিটকে যেতে চায়। কিন্তু রাস্তা ও চাকার মধ্যে থাকা ঘর্ষণ বল ছিটকে যেতে দেয় না। এ ঘর্ষণ বলের মান একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি হতে পারে না।
আপনি যদি খুব দ্রুত মোড় অতিক্রমের চেষ্টা করেন, রাস্তা ও চাকার মধ্যের ঘর্ষণ বল অর্থাৎ অভিকেন্দ্র বলের মান ও বেশি হয়।
এখন আবার ঘুরন্ত চাবির রিং ও বলের কথা ভাবুন। চক্রাকার গতির কোন এক মুহুর্তে হঠাৎ করে চাবির রিংটিকে ছেড়ে দিন এবং বল ও আপনার হাতের মাঝে থাকা সুতোটিকে কেটে দিন। কি দেখতে পেলেন? রিংটি কিংবা বলটি, উভয়েই কিন্তু তাদের মুক্তিবিন্দুর স্পর্শক বরাবর ছুটে চলে গেছে। অর্থাৎ, কেন্দ্রমুখী ও অভিকেন্দ্র বলের প্রভাবে থাকা কোন বস্তুর ওপর থেকে যদি অভিকেন্দ্র বল অপসারণ করে দেয়া হয় কিংবা মানের পরিবর্তণ এনে কমিয়ে দেয়া হয়, তবে বস্তুটি তার মুক্তিবিন্দুর স্পর্শক বরাবর ছুটে চলে যাবে।
এবার আপনার গাড়িটির কথা ভাবুন। উচ্চমানের দ্রুতি নিয়ে মোড় অতিক্রম করার সময়ে গাড়িটি উচ্চমানের ঘর্ষণ বল পাবে যা তাকে অভিকেন্দ্র বল সরাবরাহ করবে। কিন্তু ঘর্ষণ বলের মান তো একটি নির্দিষ্ট মানের বেশি হতে পারে না! এখন, খুব দ্রুতগতিতে বাঁক নেয়ার সময় যদি ঘর্ষণ বল প্রয়োজনীয় বল সরবরাহ করতে না পারে তবে গাড়িটি রাস্তা থেকে ছিটকে যাবে।
মনে করুন আপনার গাড়ির ভর mkg. এটি v ms-1 বেগ নিয়ে r m ব্যাসার্ধের রাস্তায় বাঁক নিচ্ছে। গাড়িটি নিরাপদে বাঁক নেয়ার শর্ত হবে,
F =
তাহলে আমরা বলতে পারি,
অনুভূমিক রাস্তায় যেন হঠাৎ উচ্চ মানের দ্রুতিতে বাঁক নেয়ার সময় গাড়ি ছিটকে গিয়ে দুর্ঘটনা না ঘটে, তার জন্য প্রতিটি বাঁকে রাস্তায় বাইরের দিক ভিতরের দিকের চেয়ে কিছুটা উঁচু করে তৈরি করা হয়। একে রাস্তার ব্যাংকিং বলা হয়।
অর্থাৎ, রাস্তার বাঁকে কেন্দ্রের দিক একটু ঢালু করা হয়ে থাকে।এর ফলে গাড়ি বাঁক নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অভিকেন্দ্র বলের কিছুটা গাড়ির ওপর রাস্তার দ্বারা প্রযুক্ত প্রতিক্রিয়া বলের অনুভূমিক উপাংশ যোগান দেয়। বাকি অংশ রাস্তা ও চাকার ঘর্ষণ বলই দেয়। ব্যাঙ্কিং কোণের সঠিক মান, সকল গাড়িকে বা অন্যান্য যেকোন যানবাহনকে রাস্তার বাঁকে সম্ভাব্য দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার নিশ্চয়তা দান করে।
এখানে রাস্তার উপর গাড়ির ওজন এবং রাস্তা দ্বারা প্রযুক্ত প্রতিক্রিয়া বল যা রাস্তার তলের সাথে লম্ব ভাবে কাজ করে, তা ক্রিয়া করছে। অর্থাৎ গাড়ির উপর প্রযুক্ত ক্রিয়ারত বল দুইটি। একটি ওজন, এবং আরেকটি প্রতিক্রিয়া R। মনে করি রাস্তাটি বাঁকের কেন্দ্রের তুলনায় বাইরের দিকে h মিটার উঁচু। রাস্তার উপরিতল অনুভূমিকের সাথে কোণ তৈরি করছে। এখানে প্রতিক্রিয়া R এর উলম্ব উপাংশ R cos গাড়ির ওজন প্রশমিত করে। অনুভূমিক উপাংশ কেন্দ্রমুখী বলের যোগান দেয়।
আরও পড়ুন: